সোমবার সন্ধ্যায় চৌমুহনীতে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শনকালে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, এই দেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের দেশ। সবার সমান অধিকার আছে।
“আমরা জানি কুমিল্লায় কী হয়েছে। কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী মুসলমান মিলে একটি কোরআন শরীফ মা দুর্গার পায়ে ঠেকিয়ে তারপর যে ধর্মীয় উম্মাদনা শুরু করেছিল তা থেকেই এটি শুরু হয়েছিল।”
তারা ইচ্ছা করেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য কুমিল্লায় ঘটনাটি ঘটিয়েছিল দাবি করে মানিক বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশকে আবার পাকিস্তানে রূপান্তিরিত করা। এদেশে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি সেই শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে আবার তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করা, পাকিস্তানে পরিণত করা।”
হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কঠোর সমালোচনা করেন বিচারপতি মানিক।
“এই ডিসিকে জবাবদিহি করতে হবে কেন কে ব্যর্থ হলো এজন্যে। তার তো বোঝা উচিত ছিল যেদিন বিসর্জন হবে সেদিন গণ্ডগোল ঘটতে পারে। তার যদি এইটুক বুদ্ধি না থাকে তাহলে সে কীভাবে ডিসি হলো। আমি তো মনে করি সে সম্পূর্ণ অযোগ্য ডিসি কার্য পরিচালনা করার জন্য।”
জেলা প্রশাসককে এরজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যদি না দেয় তাহলে সে যেন ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় সে ব্যবস্থা আমরা করব; আমরা গণতদন্ত কমিশন করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি থাকবে তাকে যেন বহিষ্কার করা হয়।”
বিচারপতি মানিক মন্দির ও পূজামণ্ডপের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের কাছে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী, নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রাসুল মামুন, উন্নয়নকর্মী আব্দুল আউয়াল।
গত শুক্রবার বিকালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে একটি পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হলে ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে’ একজনের মৃত্যু হয় বলে পুলিশের ভাষ্য। তবে ওই ব্যক্তি মারধরে মারা গেছেন বলে স্থানীয় হিন্দু নেতাদের অভিযোগ। পরদিন সকালে চৌমুহনী কলেজ রোডে ইস্কন মন্দির সংলগ্ন পুকুরে ভাসমান অবস্থায় পার্থ দাস (২৬) নামে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়।
দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে সহিংসতা শুরুর পর গত কয়েকদিনে তা ছড়িয়েছিল চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। রোববার রাতে রংপুরে জেলেপল্লীতে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় ২৯টি ঘর।