নোয়াখালীতে পূজামণ্ডপে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর, ১৪৪ ধারা

বিজয়া দশমীর দিনে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কয়েকটি পূজামণ্ডপ এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2021, 04:20 PM
Updated : 15 Oct 2021, 06:46 PM

পুলিশ জানিয়েছে, হামলা-ভাংচুরের সময় এক ব্যক্তি ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে’ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৮ জন।

ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পুলিশ পরে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বলে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ ইমরান জানান।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর মণ্ডপগুলোতে যখন বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে, তখনই হামলার শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর চলে।

শাহ ইমরান বলেন, “এ সময় চৌমুহনী কলেজ রোডের বিজয়া পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ ও হিন্দুদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।  যতন সাহা নামে ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি সে সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।”

যতন সাহা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মনোরঞ্জন সাহার ছেলে। তিনি পূজা উপলক্ষে চৌমুহনীতে এক আত্মীয়র বাড়িতে এসেছিলেন।

বেগমগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস জানান, পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম, বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার, পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ আহত ১৮ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সদর হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, আহত তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে তাদের হাসপতালে আনা হয়েছে।

যতন সাহাকে তাদের হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে জানান চিকিৎসক আজিম। তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

জেলার ডিসি খোরশেদ আলম বলেন, “পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে চৌমুহনীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাল সকাল-সন্ধ্যা চৌমুহনী বাজারে সেখানে১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।”

এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের অষ্টমীর দিন বুধবার কুমিল্লার একটি মন্দিরে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগের ছবি-ভিডিও ফেইসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মন্দিরে হামলা হয়, যা থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।

কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীর পাড়ে একটি পূজামণ্ডপের ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিকাল পর্যন্ত আরও কয়েকটি মন্দির ও মণ্ডপে হামলা হয়। চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

এ পরিস্থিতিতে দুই ডজন জেলায় বিজিবি নামানো হয়, বিভিন্ন স্থানে পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পেছনে কোনো ‘স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র’ আছে বলে তিনি মনে করছেন।

আর ‘ধর্মকে ব্যবহার করে যারা সহিংসতা’ সৃষ্টি করছে, তাদেরকে অবশ্যই খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারপরও শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল করে কয়েকশ লোক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। চট্টগ্রামেও একই সময়ে একটি পূজা মণ্ডপে হামলা হয়।