সোমবার সকালে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের তারা গোলাপ ফুল, বিস্কুট , কলা, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বরণ করে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য গোলাপ ফুল, বিস্কুট , কলা, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেকটি হলেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
"শিক্ষার্থীরা ফিরে আসায় ক্যাম্পাসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমরা আনন্দিত।"
হলে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীরা ‘খুশিতে আত্মহারা’ বলে জানিয়েছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবেশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা আজ আনন্দিত। দীর্ঘ ছুটির পর ক্যাম্পাসে এত পরিচিত মুখ দেখতে পারছি তা সত্যিই আনন্দের। আমরা খুশিতে আত্মহারা। আমরা সব সময় এ রকম উৎফুল্ল থাকতে চাই।"
“সব বন্ধুবান্ধব মিলে একসাথে আড্ডা দিতে পারছি। এটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম এত দিন। এ রকম দুঃসময় আর কাটাতে চাই না।"
দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও খালি করে দেওয়া হয়।
সোমবার থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ব্যতিত সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হলে ওঠতে পারবেন বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
২১ অক্টোবর ক্লাস শুরুর পর থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে হলে ওঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন। হলের দেয়ালে নতুন রঙ, বাগানে নতুন ফুলগাছ ও মাঠের ঘাস কেটে ছোট করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের ধুলোয় মলিন ডাইনিং, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুম ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। টয়লেট ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি কোনো কোনো হলে সংস্কারও করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান এই প্রাধ্যক্ষ।
সকাল ৮টা থেকে হলে উঠতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। হলে ঢোকার জন্য পরিচয়পত্র ছাড়াও সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকার কার্ড দেখা হচ্ছে। অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে হলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ সোহেল আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুল কবির হিমেল বলেন, মহামারীকালে কিভাবে হলে থাকতে হবেবে, সেজন্য নির্দেশনাবলি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে।
“কোনো শিক্ষার্থীর জ্বর বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সেই শিক্ষার্থীকে কোয়ারান্টাইনে এনে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। কোভিড রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দিতে হয় সে ব্যাপারে জানতে চিকিৎসক এনে হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ট্রেনিং করানো হয়েছে।”
যারা এখন পর্যন্ত এক ডোজ টিকাও নিতে পারেননি তাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ টিকা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সেব্রিনা সাংবাদিকদের বলেন, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, প্রাথমিকভাবে তাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। যাদের পরিচয়পত্র নেই তাদের জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের কোনোটাই নেই তারা যেন দ্রুত এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টিকার আওতায় আসেন।
ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, "টিকার কার্যক্রম চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এর পরও যদি বাকি থাকে তাহলে পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবার কার্যক্রম চালু করা হবে।"