যশোর বোর্ডের অর্থ আত্মসাৎ: দুদকে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের

চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকে অভিযোগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2021, 04:20 PM
Updated : 10 Oct 2021, 04:20 PM

বোর্ডের সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা রোববার যশোরের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তি বোর্ডের এক হিসাব সহকারী কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন ঘটনার কথা প্রকাশের পর থেকে।

সচিব স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতি আর্থিক বছরের মতো এবারও বছর শেষে বোর্ডের আয় ব্যয় যাচাইয়ের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ব্যাংক হিসাব মেলানো হয়। এ সময় দেখা যায় বোর্ডের ব্যয় অ্যাকাউন্ট থেকে নয়টি চেকে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে; কিন্তু বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের চেকে উল্লিখিত টাকার পরিমাণের সঙ্গে ব্যাংক থেকে পরিশোধিত টাকার মিল নেই। তখন হিসাব শাখার রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

সেখানে দেখা যায়, চেক জালিয়াতি করে দুইটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বোর্ডের হিসাব শাখায় কর্মরত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য চেক অনুমতির জন্য নথিতে পেশ করেন। সে মোতাবেক চেক অনুমোদিত ও প্রিন্ট হওয়ার পর আয়কর ও ভ্যাট চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক, বিআইএসই শাখায় জমা দেওয়ার দায়িত্ব তার উপর।

জালিয়াতি করা ৯টি চেকে যে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে অর্থ পরিশোধিত হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়নি এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো বিল উত্থাপন করা হয়নি বলেও অভিযোগে বলা হয়।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, বিল প্রস্তুতকারী বিল উত্থাপনের পর অনুমোদন হয় এবং অনুমোদন অনুযায়ী চেক প্রিন্টের নির্দেশনা পাওয়া যায়। চেক প্রিন্টের অনুমতি প্রাপ্তির পর একজন উচ্চমান সহকারী এই চেক প্রিন্ট দিয়ে সচিব ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেন।

অভিযোগে ৯টি চেকের বিবরণ দিয়ে বলা হয়, ‘ভেনাস প্রিন্টিং’-এর নামে সাতটি চেকে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা এবং ফটো কপিয়ারের দোকান ‘শাহীলাল স্টোর’-এর নামে দুইটি চেকে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বোর্ডের সচিব অভিযোগ দেওয়ার পর সকাল সোয় ১১টার দিকে দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষা বোর্ডে যায়। তারা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

দুদক উপ-পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা বোর্ড থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা সেটি ঢাকায় প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করে তদন্তের নির্দেশ পেয়েছেন।

এদিকে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, শুক্র ও শনি দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ‘মূল অভিযুক্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম’ অফিসে আসেননি।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে অডিট শাখায় টাকা আত্মসাতের ঘটনা শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত অফিস ত্যাগ করেন সালাম। মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সে ধরেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে সে পরিবারসহ বাড়ি ছেড়েছে।”

গত ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডের অডিট শাখা হিসাব নিরীক্ষা করতে গিয়ে ধরতে পারে ভ্যাটের জন্য দেওয়া ৯টি চেকের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ২ কোটি ৫২ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। চেকগুলো ভেনাস প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং ও শাহীলাল স্টোর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা হয়।