যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা লোপাট

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে চেক জালিয়াতি করে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2021, 07:31 PM
Updated : 8 Oct 2021, 07:31 PM

সোনালী ব্যাংক বোর্ড শাখার নয়টি চেকের মাধ্যমে দুইটি প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো ‘ভেনাস প্রিন্টিং এণ্ড প্যাকেজিং’ ও ‘শাহী লাল স্টোর’।

ঢাকার ফকিরাপুলের ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক যশোর শহরতলীর রাজারহাটের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বাবু এবং শহরতলীর শেখহাটি হাইকোর্ট মোড় এলাকার শাহী লাল স্টোরের মালিক যশোর উপশহর ই-ব্লক এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল।

এই ঘটনা তদন্তে যশোর বোর্ড চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করা হয়েছে।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অডিট অফিসার আবদুস সালাম বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ সরকারের ভ্যাটের ১০ হাজার ৩৬ টাকার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক বোর্ড শাখার ৯টি চেক ইস্যু করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

“কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় যশোরের ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং সাতটি ও শাহীলাল স্টোরে নামে দুটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের সোনালী ব্যাংকের ওই একাউন্ট থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।”

গত বুধবার চেকের মুড়ি বইয়ের সঙ্গে ব্যাংকের স্টেটমেন্ট মেলানোর সময় এই জালিয়াতি ধরা পড়ে বলে জানান সালাম।

বোর্ডের কর্মচারীদের যোগসাজসে ভুয়া চেকের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বলেন সালাম।

এদিকে, এই জালিয়াতির সঙ্গে যশোর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করেছেন ভেনাস প্রিন্টিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু।

শরিফুল ইসলাম বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনসহ চার জন জড়িত। ভুয়া প্যাড, সিল ব্যবহার করে প্রকৌশলী কামাল হোসেন ও চেয়ারম্যান এ কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। টাকা সব তাদের কাছে। আমার কাছ থেকে ফিরতি চেকে তারা এই টাকা নিয়ে গেছেন।”

এ ঘটনায় প্রশাসন শাখার একজন এবং হিসাব শাখারও একজন চড়িত বলে শরিফুল ইসলাম বাবুর দাবি।

অপরদিকে শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল বলেছেন, হিসাব শাখার এক কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত আছেন।  

তিনি বলেন, সালাম ওই কর্মচারী তার দোকান থেকে ফটোকপি করাতেন। একদিন তিনি এসে তার ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার অ্যাকাউন্ট নম্বর নেন। এরপর তিনি প্রথমে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে দেখতে পান তার অ্যাকাউন্টে ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা হয়েছে।

এ সময় তিনি ওই কর্মচারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ টাকা অন্যান্য কাজের বিলের বলে জানান তিনি, বলেন আশরাফুল।

আশরাফুল আরও বলেন, দ্বিতীয় দফায় তার অ্যাকাউন্টে জমা হয় ২৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রতিবার টাকা জমা হওয়ার পর হিসাব শাখার ওই সহকারী তার কাছ থেকে চেক নিয়ে ওই টাকা উঠিয়ে নিতেন।

তবে তিনি ওই কর্মচারীর দেওয়া প্রতি চেকের মুড়ি অংশে তার স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছেন, যাতে বোঝা যায় চেকগুলো তাকে দেওয়া হয়েছে, বলেন আশরাফুল।

শিক্ষাবোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী রেজা বলেন, ভেনার্স প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও শাহী লাল স্টোর ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখা থেকে এই টাকা তুলে নিয়েছে।

“বোর্ডের চেকে আমার সইয়ের সাথে চেয়ারম্যানের সই থাকে। তিনি দেখে-বুঝে স্বাক্ষর করেন।”

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াজ হাসান বলেন, “ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং যে চেক দিয়েছে তা শিক্ষাবোর্ডের চেক। ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।”

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এই জালিয়াতির সাথে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ও তার আস্থাভাজনরা সরাসরি জড়িত।”

বিষয়টি দুদক তদন্ত করলে আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, “কেউ যদি আমার সম্পৃক্ততা পায় তাহলে যে সাজা দেবে আমি মেনে নেব।”

এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেক প্রিন্ট করা। সেখানে হাতে লেখার সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে জালিয়াতি করে ভুয়া চেকের মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সচিব ও অডিট শাখা থেকে চেক আসে। তারা স্বাক্ষর করার পর আমি করেছি।”

কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সব রহস্য উদঘাটন করবে।

বিষয়টি নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ থানায় জিডি করেছে বলেও তিনি জানান।

এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি। রোববার সব নথি তলব করা হবে। সরকারের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে যারাই জড়িত হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”