দফায় দফায় পানি বৃদ্ধিতে নাকাল তিস্তাপারের কৃষক

দফায় দফায় পানি বাড়ায় তিস্তা অববাহিকায় আমন, আউশ, পাটসহ বিভিন্ন ফসলি জমি বার বার নিমজ্জিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।

আফতাবুজ্জামান হিরু রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2021, 11:02 AM
Updated : 30 August 2021, 11:02 AM

অন্তত পাঁচ দফায় ফসলডুবির কারণে প্রায় দুই হাজার জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত আবাদ করা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা সেই শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।

আমনের আবাদ নিয়ে রংপুরের গংগাচড়ার চড় শংকরদহের রহিমা বেওয়া (৫০) তার শঙ্কার কথা জানান।

রহিমা বেওয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবারে তোর চাচা পাঁচ বছর আগে মারা গেছে; হামি বিধুবা মানুষ, আহামার একটা ছেলেকে নিয়ে মানুষের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করছি; তাও শেষ হয়ে গেল। এক এক করি দুই তিনবার গাড়ি তাও পানি এসে শেষ হয়ে গেল।”

নদী অববাহিকাজুড়ে আমনসহ সব ফসল কোথাও পানির নিচে, কোথাও ডুবুডুবু। আমনের আবাদ দিয়ে বছরের বড় একটা সময় খাবারের জোগান হয় তাদের।

তিস্তাপারের কৃষক আব্দুল আলিম উদ্দিন বলেন, “আবাদ করছি চার দোন জমি; তার মধ্যে পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে তিন দোন; ভালো আছে এক দোন। সেটাও কী হবে বলা যায় না, যেভাবে দফা দফায় পানি বাড়ছে।”

চড় শংকরদহের আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানি বাড়ার কারণে হাজার হাজার জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ কারো কোনো খবর নাই। নদীপারের মানুষের কোনো খবর নেয় না কেউ।”

চালাপাক চড়ের রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাই আমরা তো গরিব মানুষ। আমি আমার এলাকার এক মহাজনের কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ধানের আবাদ করছি। তাও এবার দফায় দফায় পানিতে ডুবে শেষ হয়ে গেছে। মহাজনকে কী দিয়ে টাকা পরিশোধ করব জানি না।”

হাজারে কত টাকা লাভ দিতে হয় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “হাজারে ১০০ টাকা লাভ দিতে হয় সেই টাকা দিয়ে জমিতে ধান লাগাইছি। এক এক করে তিনবার লাগাইছি।”

আরেক কৃষক বললেন, “ফসল যদি আমরা টিকাতে না পারি তাহলে বউ বাচ্ছা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।  আবাদ যদি না হয় তাহলে ঢাকা পালাইতে হবে।”

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, রংপুর অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বেড়েছে প্রায় পাঁচ দফায়। নদী অববাহিকায় বোনা বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির।

“তবে আমরা কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করছি। আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।”