ঠাকুরগাঁওয়ে ‘অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায়’, গ্রেপ্তার ৬

ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক পরিবারকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2021, 11:51 AM
Updated : 8 August 2021, 11:51 AM

আগামী মঙ্গলবার তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান।

গত শুক্রবার ভোরে ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন, সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের আরাজি সিংপাড়া গ্রামের প্রয়াত মিজানুর রহমানের ছেলে রুবেল রানা (২৯), ঠাকুরগাঁও শহরের পূর্ব গোয়ালপাড়া এলাকার প্রয়াত আজিজার রহমান ছেলে সাঈদী হোসেন (৩১), টিকাপাড়া এলাকার এহিয়া আলীর ছেলে রুস্তম আলী (৩১), পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার জুলহাসের ছেলে আব্দুর রশিদ (২৮), টিকাপাড়া এলাকার আশিকুর রহমানের ছেলে শফিকুল আলম (৩১) ও ফকিরপাড়া এলাকার সরোয়ার হোসেনের ছেলে রনি হোসেন (৩১)।

এরআগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী মো. রাসেল বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় এ ছয়জনসহ অজ্ঞাত আরও সাতজনকে আসামি করা হয়।

মামলার বরাতে ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী মো. রাসেল তার ৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী নিয়ে শহরের সরকারপাড়া এলাকার চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর বাড়িতে ভাড়ায় ওঠার পর থেকেই স্থানীয় চাঁদাবাজরা রাস্তায় রাসেলকে দেখলেই তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। বিষয়টি রাসেল তার মামাত দুলাভাই সলেমান আলীকে জানান।

ঘটনার বিস্তারিত শোনার জন্য গত ৫ অগাস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাসেলের ভাড়াটিয়া বাড়িতে আসেন মামাত দুলাভাই সলেমান আলী ও তার স্ত্রী রেহানা বেগম।

এর কিছুক্ষণ পর গ্রেপ্তার রুবেল রানা, সাঈদী হোসেন, রুস্তম আলী, আব্দুর রশিদ, শফিকুল ইসলাম ও রনি হোসেনসহ ৫-৭ জন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাসেলের বাড়িতে প্রবেশ করে।

তারা রাসেলের কাছে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে; এ সময় রাসেল তাদেরকে চাঁদা দিতে না চাইলে গ্রেপ্তাররাসহ তাদের সহযোগিরা রাসেল, তার গর্ভবতী স্ত্রী, দুলাভাই সলেমান ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে।

ভয়ে রাসেল তাদেরকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দেন। অবশিষ্ট ৩০ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাসেল ও তার পরিবারকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা করা হবে হুমকি দেয় তারা।

ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, “প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ৬জনসহ তাদের সহযোগিরা রাসেল ও তার পরিবারের অন্যদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে টাকার জন্য।

“পরে কৌশলে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমান আলী বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী স্কয়ার হাসপাতালের পাশে লুকিয়ে থাকে। সেখানেও গ্রেপ্তারকৃতরা এসে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমানকে আটক করে ভয়ভীতি দেখায়।

“এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে সলেমান আলী তার বিকাশ নম্বর থেকে তাদেরকে ৮ হাজার টাকা গ্রেপ্তারকৃতের বিকাশ নম্বরে চাঁদা প্রদান করে। অবশিষ্ট ২২ হাজার টাকা কিছুদিন পরে দেওয়া হবে বলে রাসেল ঐ গ্রেপ্তারকৃতদের জানায়।”

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমান আলীর কাছে ফাঁকা ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। যদি অবশিষ্ট ২২ হাজার টাকা সময়মত না দেওয়া হয় তাহলে রাসেল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দেয় তারা।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাসেল ও তার দুলাভাইকে ছেড়ে দেয় গ্রেপ্তারকৃতসহ তাদের সহযোগীরা।

ভুক্তভোগী রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতসহ তাদের সহযোগীরা আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক বাড়ির মালিক চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেন।”

থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষণিক পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাবেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন জানায় তারাসহ তাদের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে; তাদের কাজ মানুষজনকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা। গ্রেপ্তারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের জন্য আবদেন করা হয়েছে।

ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের মধ্যে রুস্তর আলীর বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে, এরমধ্যে ৩টি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। মামলাটি আমরা তদন্ত করছি, সেই সাথে অজ্ঞাত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।