মামুনুলের দেশি-বিদেশি জঙ্গি ঘনিষ্ঠতা মিলেছে: পুলিশ

হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠতার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 02:17 PM
Updated : 16 June 2021, 11:51 AM

মামুনুলের ছয় মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড শেষে রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

এছাড়া জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ধর্ষণের প্রমাণ, হরতালে নাশকতার উসস্কানি এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাসের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারী তিনটি সংস্থাকে দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, মামুনুল হকের বিভিন্ন কার্যক্রম আমরা খতিয়ে দেখেছি। মামুনুল হক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠতার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি, তা যাচাই বাছাই করে সুস্পষ্টভাবে বলা হবে।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া উচ্চাভিলাস করা ছিল মামুনুলের ‘মূল টার্গেট’। এজন্য ‘বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা তার সাথে যোগ দিয়েছেন’। 

এ হেফাজত নেতার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার জানান, মামুনুল হকের স্থাবর ও অস্থাবর ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তার ঢাকাতে একাধিক বাড়ি এবং একাধিক মাদ্রাসা রয়েছে।

“মাদ্রাসার পরিচালনার নামে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থ আসে। সেই অর্থ তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের পেছনে ব্যয় না করে উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের কাজে ব্যয় করতেন। সেগুলো আইনসিদ্ধ নয়, আইনগত বৈধতা নেই।”

পুলিশের কাছে ঢাকার বাড়িসহ সম্পদের ব্যাপারে ‘সঠিক উত্তর দিতে পারেননি’ মামুনুল হক।

মামুনুল হক দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে আশা বিপুল পরিমাণ অর্থ ‘আত্মসাৎ করেছেন’ বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে।

জান্নাত আরা ঝর্ণার ধর্ষণ মামলার প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ধর্ষণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদে বিয়ের কোনো বৈধ কাগজপত্র এবং কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। শরিয়ত মোতাবেক বা দেশের আইনি কাঠামো অনুসারে বিয়ের কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি।

মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে ধর্ষণের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মামলায় ঝর্ণা যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা তার মিল পেয়েছি। মামলার বাদী যাতে ন্যায় বিচার পান সে বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে।

গত ২৮ মার্চ হরতাল সহিংসতা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, হরতালের নামে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত নাশকতার ঘটনা ঘটে। এ হরতালের তার উসকানিমূলক বক্তব্য দলের নেতা-কর্মীদের নাশকতায় সাহস যুগিয়েছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন হেফাজতের এ নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, মামুনুল হক ২৫ মার্চ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জে আসেন। হরতালে নাশকতার পর ৩১ মার্চ আবার নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন তিনি।

হরতালের সহিংসতায় উসস্কানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে মামুনুলের ‘স্বীকার করার’ উল্লেখ করে বলেন, “আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।”

গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের এক কক্ষে মামুনুল হক এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন। সেই রিসোর্ট তার সঙ্গী ছিলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা।

পরে ঝর্ণার করা ধর্ষণের মামলাসহ রিসোর্ট ও সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কার্যালয়, স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় মামুনুল হককে আসামি করা হয়।

এর আগে গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সহিসংতার ঘটনারায় পুলিশ ও র‌্যাব ছয়টি মামলা করে। এর তিনটিতেও আসামি মামুনুল।

সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে ৬টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিএসবি) শফিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী প্রমুখ।