টাঙ্গাইলে ‘শ্মশানে’ বনবিভাগের স্থাপনা, ক্ষুব্ধ গারো সম্প্রদায়

টাঙ্গাইলের মধুপুরে গারো সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের একটি ‘শ্মশানে’ বনবিভাগের স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিএম এ রাজ্জাক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2021, 05:09 PM
Updated : 31 May 2021, 05:09 PM

বনবিভাগের কাজ বন্ধের দাবিতে রোববার মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়নের টেলকী বাজারে স্থানীয় গারোরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে।

তবে এই স্থাপনা নির্মাণের জায়গায় শ্মশান থাকার কথা জানা নেই বলে বনবিভাগের ভাষ্য। 

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ ও আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক স্থানীয় বাসিন্দা টনি ম্যাথিউ চিরান জানান, বন বিভাগের প্রকল্পে থাকা বাগানের জায়গার মধ্যে পড়েছে টেলকী গ্রামের মান্দিদের দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশান।

গারোরা শ্মশানকে বলে 'মাংরুদাম', যা তাদের কাছে খুবই পবিত্র স্থান।

টেলকী গ্রামের বাসিন্দা প্রায় ৬০ বছরের সুপ্তি রানী চিরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফেঅর ডটকমকে বলেন, গারোদের আদি ধর্মের নাম ‘সাংসারেক’। সর্বত্র গারো বলে পরিচিত হলেও তারা নিজেদের ‘মান্দি’ বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে; কথা বলে ‘আচিক’ ভাষায়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংসদ (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জন জেত্রা বলেন, পর্যটন আর উন্নয়নের নামে মান্দিদের প্রাচীন মাংরুদাম [শ্মশান] দখল করে স্থাপনা নির্মাণ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। আমি খ্রিস্টান হলেও নিজের ভেতরে সাংসারেক ধর্মটি লালন করি। তাই মধুপুরের টেলকী গ্রামের আদিবাসীরা ভূমি ও প্রাচীন সামাজিক কবরস্থান ও শশ্মানের স্থানে ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও আরবোরেটাম বাগানের নামে স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে নেমেছে।

এই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ না হলে আন্দোলন আরো জোরদার করার হুমকি দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ।

এখানকার গারো সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন খ্রিস্টান ধর্ম অবলম্বন করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইল বনবিভাগের মধুপুর জাতীয় উদ্যান সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম হাবিবুল্লাহ্ বলেন, “বাগানের সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য একটি ভবন করা হবে সেখানে। এর ভেতরে কোনো শ্মশান নেই। সীমানা প্রাচীর হলে গারোরা ওই জমি দখল করে খেতে পারবে না, তাই প্রতিবাদ করছে।”

স্থানীয় গারো নেতাদের নিয়ে বারবার বৈঠক করেই এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আরবোরেটামের ভেতরে শ্মশান আছে-এমন বিষয়টি ইতিপূর্বে কেউ বনবিভাগের কাউকে জানায়নি। বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ ওই জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে অনেকবার প্রাথমিকভাবে সার্ভেসহ নানা কার্যক্রম করেছে।

“স্থানীয় গারো নেতারা এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি না করায় আমরা কাজ শুরু করেছি। এখন সীমানা প্রাচীর করতে যাওয়াতেই আপত্তি উঠতে শুরু করেছে।”

তিনি আরও বলেন, যে জায়গায় গারোরা তাদের শশ্মান দাবি করছে সেখানে কিছুদিন আগেও জঙ্গলে ভরা ছিল। পরিষ্কারের সময় এখানে কোনো শ্মশানের চিহ্নও পাওয়া যায়নি।

“শুধু বনের ৩ হেক্টর জমিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে এই গড়াঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ গাছ রক্ষার্থে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য।”

বনবিভাগ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে মধুপুর জাতীয় উদ্যানে ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা শীর্ষক একটি প্রকল্প শুরু হয়। এই বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।