উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, স্পিডবোট চালক মো. শাহ আলম (৩৬) নিয়মিত ইয়াবা ও গাঁজা সেবনে আসক্ত ছিলেন।
“দুর্ঘটনার পর এই চালকের শরীর থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে তার মাদক সেবনের প্রমাণ মিলেছে।“
ডা.শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, “মাদকাসক্ত স্পিডবোট চালক শাহ আলম নিয়মিত এমফিটামিন (ইয়াবা) ও মারিজুয়ানা (গাঁজা) সেবনে আসক্ত ছিলেন। ইতোমধ্যে আমরা তার ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পেয়ে সেটা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।”
গত সোমবার ভোরে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে শিমুলিয়া থেকে আসা একটি দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এতে স্পিডবোটটি ডুবে যায় এবং পরে ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নৌ-পুলিশের এসআই লোকমান হোসেন বাদী হয়ে শিবচর থানায় স্পিডবোটের চালক শাহ আলম, দুই মালিক চান্দু মিয়া ও রেজাউল এবং ঘাটের ইজারাদার শাহ আলম খানের নামসহ অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
দুর্ঘটনার পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই চালককে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় ভর্তি করা হয়।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, “দুর্ঘটনার আগে চালক মাদক সেবন করেছেন। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। ডোপ টেস্ট থেকে এসব তথ্য আমরা পেয়েছি।”
তিনি বলেন, কোনো মাদকাসক্ত যেন স্পিডবোট চালক না হতে পারেন সেই বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ, স্পিডবোটের রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্স থাকতেই হবে। এসব না থাকলে এখানে আর কোনো অবৈধ নৌযান চলতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, স্পিডবোট চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হবে। এমনকি নিয়মিত তাদের ডোপ টেস্ট করতে হবে। যারা মাদকাসক্ত হবেন বা ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসবেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনজার্চ আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, স্পিডবোটের চালক শাহ আলম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভাতা ঈদগাহপুর এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে গাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করেন শাহ আলম। প্রায় ১৮ বছর আগে শিমুলিয়ায় আসেন কাজের সন্ধানে। পরে যোগ দেন স্পিডবোট চালক হিসেবে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে। তাদের দুই সন্তান থাকে নানার বাড়ি। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় শাহ আলম অস্থায়ীভাবে এখানে সেখানে বসবাস করতেন। স্থায়ী কোথাও বাসা করেননি।
শাহ আলমের বিষয় তার বাবা আবুল কালাম বলেন, শাহ আলম তাদের টাকা দিতেন না। ঠিকমতো কাজ করতেন না। ইচ্ছা হলে কাজে যেতেন না হলে যেতেন না। সংসার করেছেন ১৪ বছর। পরে বউয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলে একাই ছিলেন। নিজের স্পিডবোট ছিল না। মাসিক বেতনে চাকরি করতেন।