যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে মোদীর পুজো, প্রতিশ্রুতি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিলেন, দিলেন ‘কমিউনিটি হল কাম সাইক্লোন শেল্টার’ গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকসাতক্ষীরা প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2021, 04:54 AM
Updated : 27 March 2021, 08:58 AM

সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ১০টার আগে আগে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শ্যামনগরে পৌঁছন নরেন্দ্র মোদী। এ সোবাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বানানো হ্যালিপ্যাডে নেমে সড়কপথে তিনি পৌঁছান যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে।

খদ্দরের পাঞ্জাবি ও গলায় উত্তরীয় পরিহিত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরে স্থানীয় তরুণীরা শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মন্দির চত্বরে স্বাগত জানান তাকে।

পরে মন্দিরে প্রবেশ করে মোদী কালী প্রতিমায় মুকুট পরান। নানা বস্ত্রে দেবীকে সাজিয়ে জবা ফুলের মালা পরিয়ে শুরু করেন আরাধনা। প্রার্থনা শেষে তিনি মন্দিরের প্রতিমা এবং গর্ভগৃহ প্রদক্ষিণ করেন।

প্রায় ২১ মিনিটের এই প্রার্থনা পর্ব পরিচালনা করেন মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দির হিন্দুদের একটি অতি প্রাচীন পবিত্র স্থান। সেখানে হিন্দু ধর্মের শক্তির দেবী সতীর দেহাবশেষের একটি অংশ পড়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।

ধারণা করা হয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আনারি নামে একজন ব্রাহ্মণ এই মন্দির নির্মিত করেছিলেন।

তিনি যশোরেশ্বরী পীঠের জন্য ১০০ দরজার মন্দির তৈরি করেছিলেন। পরে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা লক্ষ্মণ সেন এটি সংস্কার করেন এবং সর্বশেষ রাজা প্রতাপাদিত্য ষোড়শ শতাব্দীতে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।

পুরাণ মতে, দেবী সতীর আত্মহননের পর, তার স্বামী শিব দেহাবশেষ নিয়ে প্রলয় নৃত্য করেন। বিষ্ণু এই প্রলয় নৃত্য থামানোর চেষ্টার সময় সতীর মৃতদেহে সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেন। ফলে তার দেহ ছিন্ন হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। যেসব জায়গায় তার দেহের অংশ পড়েছিল সেগুলোর প্রতিটিকে বলা হয় শক্তি পীঠ।

যশোরেশ্বরী মন্দির ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি। এই পীঠগুলো ভারত ও ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি পীঠ।

৫১টি পীঠের মধ্যে ঈশ্বরীপুরের মন্দিরটি হলো সেই স্থান, যেখানে দেবী সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা এসে পড়েছিল বলে হিন্দুদের বিশ্বাস।

মন্দির-বেদীর ওপর প্রতিষ্ঠিত মাতৃমূর্তির শুধু মুখমণ্ডলই দেখা যায়। মূর্তির অবয়ব পুরোটাই মখমলে আবৃত। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলঙ্কার। মাথায় সোনার মুকুট। লোলজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি।

যশোরেশ্বরী মন্দিরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন্দিরে দুই হাজার রুপি উপহার দেন এবং ও একটি কমিউনিটি হল কাম সাইক্লোন শেল্টার গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বলে পুরোহিতরা জানান।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে যোগ দিতে দুদিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদী। বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গিয়ে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজো দেওয়ার পরপরই তিনি হেলিকপ্টারে রওনা হন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।

সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সমাধিসৌধে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মোদীই প্রথম কোনো বিদেশি সরকারপ্রধান, যিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গীপাড়ায় যাচ্ছেন।

সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।

এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন নরেন্দ্র মোদী।