শনিবার দুপুরে উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এই হামলা চালায়।
এ সময় সেখানে উপস্থিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকেও ‘লাঞ্ছিত’ করা হয় বলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান।
হামলার সময় সচিব আবদুল মান্নানও বাড়িতে ছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে আক্রান্ত হননি।
স্বাস্থ্যসচিবের অভিযোগ, তাদের জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা এই হামলা চালায়।
“তারা বলছে, এমপি সাহেবের নির্দেশ ছাড়া এই কাজ হবে না। তারা আজ হামলা চালিয়েছে।”
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ এবং স্বাস্থ্যসচিব মান্নানের বাড়ি একই গ্রামে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী লিটনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।
ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ সকালে সচিব সাহেব নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে আসেন। এ সময় ২০-২৫ জন লোক এসে সাংসদকে কেন জানানো হয়নি সেজন্য নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলে। এ নিয়ে সচিবের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা-কাটাকাটির পর তারা ফিরে যায়।”
পরে দুপুর ১টার দিকে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র হাতে শতাধিক মানুষ স্বাস্থ্য সচিবের বাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ করতে থাকেন ও নির্মাণকাজ বন্ধ করতে শ্রমিকদের মারধর শুরু করেন বলে জানান স্বাস্থ্য সচিবের ছোট ভাই নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, “এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম এগিয়ে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়।”
খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ ও পরে র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সচিব মহোদয়কে প্রটোকল দিতে ওখানে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কিছু লোকজন রড, লোহার পাইপ ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসে হামলা করে। আমি বাইরে গিয়ে জানতে চাইলে তারা আমার উপর হামলা করে। আমার শরীরে আঘাত করে।”
সচিবের ভাই নাসির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হামলাকারীদের অনেকেই তাদের পরিচিত।
“মূলত চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ মিয়ার নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মুরাদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এলাকাতেই ছিলাম না।”
তাহলে তার নাম কেন আসছে- এই প্রশ্নে মুরাদ বলেন, “আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সে কারণে হয়ত আমার নাম বলছে।”
হামলার ঘটনার পর পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জিহাদুল কবিরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি এসে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিটন হায়দার]