সিলেটের ‘কিছু এলাকায়’ বিকালে বিদ্যুৎ ফেরার আশা

গ্রিড উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের কারণে সিলেট মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ কখন শেষ হবে নিশ্চিত করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 09:03 AM
Updated : 18 Nov 2020, 10:31 AM

বুধবার দুপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেছেন, কয়েকটি পিলার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে।

“সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বুধবার বিকালের দিকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে বাকি এলাকায় কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।”

বিদ্যুৎ সরবরাহ মেরামত করতে মঙ্গলবার রাত থেকে ‘প্রায় ৪০০ কর্মী’ কাজ করছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে এদের সঙ্গে ঢাকা থেকেও একটি টিম সিলেটে এসেছে কাজে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি এম কাজি এমদাদুল ইসলাম।

গত মঙ্গলবার সকালে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রিড লাইনে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে সিলেট জেলাসহ সুনামগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা। রাত সুনামগঞ্জের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

তবে সিলেট মহানগরসহ কয়েকটি উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বুধবার দুপুরেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

দুর্ঘটানার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার আশা কথা পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছিল। তবে এখন তারা বলছেন, এক সঙ্গে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে অনেক সময় লাগবে। আগুনে গ্রিড লাইন ও ট্রান্সমিটার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে।

পিডিবি ও পিজিসিবি একসাথে এগুলো সংস্কারে কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে।

প্রকৌশলী মোকাম্মেল বলেন, “আমাদের প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক আছেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয় হওয়ায় প্রায় তিন লক্ষাধিক গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন। বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে আমরা চেষ্টা করছি। গ্রিডের লোকজনও অবিরাম কাজ করছেন।”

আগুনের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি নগরবাসীকে জানাতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে নগরীতে মাইকিং করা হয়।

এদিকে, বিদ্যুতের বিপর্যয়ে সিলেট নগরে পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাসা-বাড়ি ও হাসপাতালে রোগীরাও বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে অফিস আদালতের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা আয়শা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদুৎ নেই। ঘরে পানি নেই। চরম দুর্বিষহ অবস্থায় সময় যাচ্ছে। বিদুৎ ছাড়া সব কিছুই অচল।

আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম পলাশ বলেন, বিদুৎ না থাকায় দোকানে আলো নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন বেশি।

“আগুনে দুইটি ট্রান্সফরমার পুড়েছে কিন্তু ব্যাক-আপ হিসেবে আরো ট্রান্সফরমার রাখা উচিত ছিল। কবে এসব ট্রান্সফরমার মেরামত হবে আর কবে আমরা বিদুৎ পাব তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।”

ট্রান্সমিটারের জ্বালানি তেল থেকে এ আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক শওকত হোসেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় গ্রিড লাইনের দুটি ট্রান্সমিটারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

আগুন নেভাতে গিয়ে জয়ন্ত কুমার নামে দমকলবাহিনীর এক সদস্য দগ্ধ হন। তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি

পাওয়ার গ্রিড ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্রের গ্রিডের এ অগ্নিকাণ্ডে ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন বলে মঙ্গলবার রাতে উপকেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন।

এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপণে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক (ওএন্ডএম) পিজিসিবি কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের উপ-মহাব্যবস্থাপক রূপক মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ্ জায়েদী স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছেন।