মাল্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলে

গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এ বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক কৃষক মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 09:07 AM
Updated : 21 Sept 2020, 09:07 AM

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. এম.এম কামরুজ্জামান বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে কৃষি উন্নয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে প্রকল্প এলাকার গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলানা ও সাতক্ষীরা জেলার ১৭টি উপজেলায় মাল্টা চাষ বৃদ্ধি করতে ১০০টি মাল্টা বাগান স্থাপন করা হয়। এ বছর ওই সব বাগানে ১৫০ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মাল্টা, সবজি, ফল, তৈলবীজ ও গমসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

উদ্ধাবিত ওই প্রকল্পের ‘বারি মাল্টা-১’ চাষ উদ্বুদ্ধ করতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলায় বিনামূল্যে মাল্টার চারা ও সার বিতরণ এবং রোপনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

কামরুজ্জামান বলেন,“আমরা ৫ জেলায় ১০০ বাগান করেছি; এসব বাগানে এ বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি দেখে অনেকেই মাল্টা বাগান করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে মাল্টার উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর আমারা  জোর দিয়েছি। তাই আগ্রহীদেরও আমরা এ প্রকল্প থেকে মাল্টা বাগান করে দেব।”

“মাল্টা দেশের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম। মাল্টা চাষ সম্প্রসারিত হলে এর আমদানী নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে অনেক বেকার কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পাবেন। সম্ভাবনাময় মাল্টা চাষ এ অঞ্চলে সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে।”

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, “প্রকল্পের সহযোগিতায় বারি মাল্টা-১ আমি ২০১৬ সালে আমার ২ একর জমিতে রোপন করি। ২০১৭ সালেই প্রতিটি গাছ থেকেই ৫/৬ কেজি করে মাল্টার ফলন পাই। গাছ ক্রয় বা রোপনে কোন খরচ লাগেনি। তাই প্রথম বছরই লাভের মুখ দেখি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও আশানুরূপ ফলন পেয়ে ভাল আয় করেছি। চলতি বছর আমার বাগানে প্রচুর মাল্টা ধরেছিল।

“থোকায় থোকায় মাল্টার ভারে গাছের ডাল ঝুলে পড়েছে; ফলন দেখে মন ভরে গেছে। আশা ছিল ৪ টন ফলন পাব। কিন্তু বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে গাছের মাল্টা ঝড়ে পড়ছে। তারপরও আমি অন্তত ৩ টন ফলন পাব বলে আশা করছি।”

ওবায়দুর আরও বলেন, আগে এই জমিতে তিনি ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসল করতেন । তাতে বছরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকত। কিন্তু মাল্টা চাষে ৪ গুন বেশি অর্থাৎ ২ লাখ টাকা লাভ পাবের বলে আশা করছেন।

“মাল্টা চাষ করে যেমন প্রচুর লাভ হয়, তেমনি গাছ থেকে কলমের চারা উৎপাদন করেও মল্টার চেয়ে বেশি আয় করা যায়। চাষাবাদের শুরুতে প্রকল্প থেকে আমাকে  বিনামূল্যে মাল্টার চারা দেওয়া হয়। এছাড়া তারা তখন প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক ও চারা রোপন করে দিয়েছে। এখন আমরা তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করছি। এতেই সোনা ফলছে।

“মাল্টা চাষ আমাকে সমৃদ্ধি দিয়েছে; বেকারত্ত্ব মোচনে মাল্টা চাষ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।”

প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. রেজাউল করিম বলেন, “এ বছর বাগানে প্রতি একরে দেড় থেকে দুই টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে। মাল্টা বিক্রি করে কৃষক অধিক লাভের টাকা ঘরে তুলছেন। তাদের দেখাদেখি অনেক কৃষক লাভ জনক মাল্টা চাষে প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

“আক্টোবর মাল্টা চাষের উপযুক্ত সময়। তাই আমরা এ মাসে আগ্রহী  ১০ জন কৃষককে ১০টি নতুন মাল্টা বাগান করে দিচ্ছি।”

কদমপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন (৪৮) বলেন, আমার চাচা ওবায়দুর রহমানের মাল্টা বাগান দেখে আমি মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছি। ইতোমধ্যে জমি প্রস্তুত করে প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা বাগান সৃজন করে দিতে চেয়েছে।”

এছাড়া কদমপুর গ্রামে আরও অনেক কৃষক লাভজনক মাল্টা বাগান করেছেন বলেও জানান কৃষক জাকির।