কয়রার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, গত কয়েকদিন আবহাওয়া বৈরী হওয়ায় প্রতিদিনই জোয়ারের পানি বাড়ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার রিং বাঁধ ডুবে গ্রামে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ বেড়েছে।
“গত দুইদিনে কয়রার প্রতিটি গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই তিন থেকে চার ফুট পানি উঠেছে। খাবার-যোগ্য পানির অভাব আরও তীব্র হয়েছে। প্রায় সব পরিবারেই খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট বেড়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফরিদউদ্দীন জানান, এর আগে চার বার সরকারি ও স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও টেকসই মেরামতের অভাবে বারবার পাইকগাছার এই এলাকার বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকলয়ে ঢুকছে।
তিনি জানান, স্থায়ী বাঁধ মেরামতের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক জানান, ভাঙন কবলিত এলাকাটি খুবই ঝুকিপূর্ণ। কয়েকবার ভেঙেছে, যা স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এবার ঝুকিপূর্ণ বাঁধটি মেরামত করতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাঁধা আসায় তা করা সম্ভব হয়নি।
ফলে অমাবশ্যার জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে কোটি টাকার ফসল ও চিংড়ি ঘেরের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে তিনটি গ্রামের অসংখ্য বাড়ি-ঘর।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন জাগ্রত যুব সংঘের সহ-সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, কয়রার কাজী পাড়া, পুটিহারী, হরিণখোলা, কাশির হাটখোলা, ঘাটাখালি, দুই নম্বর কয়রা এলাকায় হঠাৎ করে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে।
কামাল হোসেন বলেন, আবহাওয়া বৈরি হওয়ায় জোয়ারের সময় হরিণখোলা, ঘাটাখালি, দুই নম্বর কয়রার রিং বাঁধের ওপর দিয়ে কপোতাক্ষ নদের পানি গ্রামে প্রবেশ করছে। গ্রামগুলোতে ২৫ হাজার মানুষ চরম সংকটে পড়েছেন। দুর্ভোগ তাদের পিছু ছাড়ছে না।
কয়রার উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা রুহুল কুদ্দুস বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ জোয়ারের পানি উঠেছে। পানি বাড়ায় কয়রার উত্তরবেদকাশি আবারও লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
কয়রার গাজী পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর ঘরে ফিরে কোনো মতে বসবাস করছিলাম। কিন্তু বুধবার দুপুরে জোয়ারের পানি আবার আমার ঘরে ডুকে গেছে। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে আছি।
“অস্তিত্ব রক্ষায় কয়রাবাসী নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করেছিল। হঠাৎ করে বুধবার জোয়ারের অতিরিক্ত পানির তোড়ে বাঁধ উপচে বিভিন্ন গ্রামে পানি ডুকেছে। এতে নতুন করে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর ।”
অবিলম্বে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারিভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় সংবাদকর্মী বাবুল আক্তার বলে জানিয়েছেন, এদিকে প্রবল জোয়ারে পাইকগাছার বয়ারঝাপায় ভাঙা হাড়িয়া ওয়াপদার বেড়িবাঁধ আবারও ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ তিন গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ এখন দুর্ভোগে রয়েছে।
কয়রা-পাইকগাছা এলাকার সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।