জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওর পাড়ে বিথঙ্গল গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন এ আখড়া বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান।
বিথঙ্গল আখড়ার পরিচালক সুকুমার দাস মন্ত্র গোস্বামী জানান, প্রায় ৫’শ বছরের পুরোনো এ আখড়া শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা করেন। বিশাল এই আখড়ায় মোট ১২০টি কক্ষ রয়েছে। আগে কক্ষগুলোতে ১২০ জন বৈষ্ণব থাকতেন; তবে বর্তমানে বৈষ্ণব রয়েছেন মাত্র কয়েকজন।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে যাতায়ত ব্যবস্থা ভাল থাকায় বিথঙ্গল আখড়ায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। তবে হাওরে পানি শুকিয়ে গেলে যাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে; এ সময় যেতে হয় গাড়িতে ও পায়ে হেঁটে।
মন্ত্র গোস্বামী বলেন, রামকৃষ্ণ গোস্বামী হবিগঞ্জের রিচি পরগনার অধিবাসী ছিলেন।
তিনি বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিথঙ্গলে এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলা ১০৫৯ সনে রামকৃষ্ণ মারা যান। পরে আখড়ায় রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের উপর একটি মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়ে।
মঠের সামনে একটি নাট মন্দির এবং পূর্ব পাশে একটি ভাণ্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি পুরাতন ইমারত আছে।
আখড়ার পরিচালক বলেন, “সাধারণত বর্ষা মৌসুমে আখড়ায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। এ সময় আঁকা-বাকা পথ বেয়ে নৌকা দিয়ে প্রাকৃতি অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে দর্শনার্থীরা পৌঁছে যায় বিথঙ্গল আখড়ায়।
আখড়ায় ঘুরতে আসা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ আখড়াটি এখন পর্যটনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে গেছে। ঐতিহাসিক এ আখড়াটি দেখতে প্রতিদিন শতশত নারী-পুরুষ ও বাচ্চারা এখানে আসছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের ভিড় গেলে থাকে।”
কলেজছাত্র ফরহাদ আহমেদ বলেন, “ভাটি এলাকা দিয়ে অথৈ জলরাশি দেখতে দেখতে আখড়া এসেছি। পথিমধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। আর আখড়ার প্রাচীন বিল্ডিংয়ের কারুকার্যগুলোও বেশ আকর্ষণীয়।”
স্থানীয় সুব্রত কুমার বৈষ্ণব জানান, প্রাচীনতম এ আখড়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আসা যাওয়া করে। এখান থেকে নানান রোগের সেবাও নিয়ে থাকেন তারা। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ভাটির এলাকার পর্যটনের অন্যতম স্থান এটি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে নানান ব্যবস্থাও রয়েছে।