শেরপুরে আদিবাসী কৃষ্টি একাডেমি স্থাপনের দাবি

শেরপুরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য সাংস্কৃতিক একাডেমি স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে।

শেরপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2020, 06:03 PM
Updated : 18 August 2020, 06:05 PM

মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইগাতীর গাজনী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আন্তার্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

শেরপুর জেলায় গারো, কোচ, হাজং, বর্মন, বানাই, ডালু ও হদি এ সাত নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস। তবে মুখে মুখে প্রচলিত এসব ভাষা বিলুপ্তির পথে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে নৃ-জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি।

সেজন্য স্থানীয় নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণে শেরপুর জেলার পাহাড়ি জনপদে ‘আদিবাসী কালচারাল একাডেমি’ স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন তাদের নেতারা।

নাগরিক প্ল্যাটফরম ‘জনউদ্যো ‘ শেরপুর কমিটি, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (টিডাব্লিওএ) সহ গারো, কোচ, হাজং, বর্মন, হদিসহ বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ আয়োজনে ‘কভিড-১৯: আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে স্থানীয় আদিবাসীদের ভূমির ঐতিহ্যগত মালিকানার স্বীকৃতি প্রদান এবং বাপ-দাদার ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিও জানানো হয়।

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নেতা মুক্তিযোদ্ধা হরলাল বর্মনের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সুমন্ত বর্মন।

আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, আদিবাসীরা সব সময় বৈষম্য ও শোষণের শিকার হয়ে আসছে। শেরপুরে পাহাড়ি জনপদে বসবাসকারী অনেক আদিবাসীর জমি জবর দখল করে নেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বাপ-দাদার ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আদিবাসীদের সন্তানদের মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়।

অবিলম্বে আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত জমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করার দাবি জানান তিনি।

জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতিবৈচিত্রে বহুত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে দেশের সব নাগরিকের মাঝে আদিবাসীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে।

“দেশের উন্নয়ন ধারায় সামগ্রিক জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আদিবাসীদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।“

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রীবরদী টিডাব্লিওএ সভাপতি প্রাঞ্জল এম. সাংমা, ঝিনাইগাতীর সহ-সভাপতি চিন্তাহরণ হাজং, জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, বার্ড কনজারভেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুজ্জামান, আদিবাসী নেতা বিহার জাম্বিল, মনিন্দ্র বিশ্বাস, যুগল কিশোর কোচ, বন্দনা চাম্বুগং, সুকুমার হাজং ও ছাত্রনেতা মিঠুন কোচ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় শোক দিবস স্মরণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে কবি ব্রিজেট বেবী স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন এবং প্রিয়াংকা রানী বর্মন সংগীত পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে শেরপুরের পুলিশ সুপারসহ করোনাভাইরাস আক্রান্তদের আরোগ্য কামনায় সর্বধর্মীয় প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন পাস্টার জনাথন বনোয়ারি।