পাবনায় গ্রেপ্তার যুবক ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

পাবনায় গ্রেপ্তারের পর পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুক যুদ্ধে এক যুবক নিহত হওয়ার পর হত্যার অভিযোগ তুলেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2020, 02:37 PM
Updated : 12 July 2020, 02:37 PM

এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা ১২টা থেকে একঘণ্টা জেলা শহরের রামচন্দ্রপুরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এলাকাবাসী ও তার স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

মানববন্ধনে স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশ নিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তানজীব শেখ ‘হত্যার’ বিচার চায়

নিহত তানজীব শেখ (৩০) জেলা শহরের রামচন্দ্রপুর এলাকার বাবু শেখের ছেলে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান তানজীব ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য।

মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার চর শিবরামপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে তানজীব নিহত হয় বলে পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।  

পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশী অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ায় আত্মরক্ষায় পুলিশও গুলি ছোড়ে। বন্দুকযুদ্ধে তানজীবের মৃত্যু হয়েছে।

তানজীবের বাবা বাবু শেখ বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের চাঁদা খাঁ বাঁশতলা মোড় থেকে তানজীব ও তার পাঁচ বন্ধুকে আটক করে পুলিশ। খবর পেয়ে রাতে তিনি থানায় গেলে ওসি নাসিম আহমেদ তার ছেলে তাদের হেফাজতে বলে জানান।

মানববন্ধন চলাকালে রামচন্দ্রপুরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়

“তার সাথে দেখা করতে চাইলে ওসি বলেন তানজীবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসপি অফিসে নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে। কিন্তু সকালেই বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাকে হত্যা করে পুলিশ।”

তানজীবের বোন মিতু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাই সন্ত্রাসী ছিল না, তার বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলাও নেই। এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে টাকা দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করিয়েছে।”

মানববন্ধনে নারীরাও অংশগ্রহণ করেন

পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদ বলেন, “তানজীবের শরীরের রগ কাটা, শরীরে প্রচণ্ড মারপিটের চিহ্ন ছিল। থানা হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু হওয়ায় ঘটনা আড়াল করতে পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়েছে।”

তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেছেন।

মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, “তানজীবের পরিবারের চার সদস্য মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারটির তিন প্রজন্ম্ই আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত। তানজীবের বিরুদ্ধে কিছু রাজনৈতিক মামলা ছাড়া বড় ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ কখনওই ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এমন একটি হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বিব্রত এবং ঘটনার বিচার চাই।”

তবে থানা হেফাজতে নয় পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে তানজীবের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

নিহত তানজীব শেখ

“তানজীব চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টাসহ গুরুতর বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।”

এসপি রফিকুল আরও বলেন, মঙ্গলবার আটকের পর তার স্বীকোরোক্তি অনুযায়ী রাতে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তানজীবের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান।

তানজীবের স্বজনরা আবেগের বশে অসত্য অভিযোগ করছেন বলেও দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার।