কামরানের প্রয়াণে শোকের ছায়া সিলেটে

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সিলেটের মানুষ।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2020, 03:16 PM
Updated : 15 June 2020, 03:16 PM

রাজনৈতিক সহকর্মীসহ এলাকার মানুষের কাছে ভরসার স্থল হিসেবে পরিচিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য।

সিলেট আওয়ামী লীগের কথা উঠলেই ভেসে ওঠে একটি মুখ-মাথায় সাদা টুপি, মুখে কালো গোঁফ আর চোখে চশমা পরা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটির নাম বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দলের সীমানা পেরিয়ে পুরো সিলেট নগরবাসীরই আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের দুইবারের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “জনমানুষের নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে হারাল। কামরান ছিলেন সিলেটের মাটি ও মানুষের প্রিয় নেতা ও অভিভাবক। তিনি সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে সবার আগে থাকতেন; সবসময় দরিদ্র মানুষের সমস্যা নিয়ে এগিয়ে আসতেন।”

কামরানকে সিলেটের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখযোদ্ধা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান রেখেছেন অসামান্য অবদান। তার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বাহক একজন লড়াকু নেতাকে আমরা হারালাম এবং সিলেটের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয়।”

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মতো একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, একজন দক্ষ জনপ্রতিনিধিকে হারিয়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি সিলেট পৌরসভা ও সিলেট সিটি করপোরেশেনের বারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।”

তার মৃত্যুতে নগরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, বলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বলেন, “সিলেটের জনপ্রিয়, নন্দিত নেতার নাম বদর উদ্দীন আহমদ কামরান। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসত, ভরসা রাখত তার উপর। তিনিও মানুষকে ভালোবাসতে জানতেন।”

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, “কামরান শুধু একজন রাজনৈতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন সিলেটবাসীর হৃদয়ের ধন। তিনিই সিলেটে সম্প্রীতির রাজনীতি শুরু করেছেন। মারামারি খুনোখুনি পছন্দ করতেন না। তিনি কখনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করতেন না। কামরান তার দূরদর্শিতায় গণমানুষের সাথে যে আত্মিক সম্পর্ক  স্থাপন করে গেছেন সিলেটবাসী তা কখনও ভুলবে না।”

১৯৬৯ এর রাজনীতির উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন কামরান। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান।

২০০৩ সালে নির্বাচন হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বার কারাবরণ করতে হয় এই নেতাকে। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ দুটি সিটি নিবর্চাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চোধুরীর কাছে হেরে যান তিনি।

১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটে দলের রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে পুনরায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ হারান কামরান। প্রায় তিন দশক পর কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয় সিলেট আওয়ামী লীগের। তবে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে নির্বাহী সদস্য করা হয় কামরানকে।