‘পুলিশের পিটুনিতে’ মৃত্যু: ‘টাকায় মীমাংসা’, তদন্তে কমিটি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ‘পুলিশের পিটুনিতে’ কৃষক নিখিল তালুকদার নিহতের ঘটনা পাঁচ লাখ টাকায় মীমাংসা করেছেন বলে এলাকাবাসী ও্ স্বজনরা জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2020, 05:03 PM
Updated : 6 June 2020, 05:03 PM

একই সঙ্গে এই ঘটনায় জেলা পুলিশ তিন সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শনিবার দুপুরে কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই ঘটনার মীমাংসায় বৈঠক হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিখিলের স্বজনরা মীমাংসার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে পুলিশ কোনো কথা বলছে না।

সভায় কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, পৌর মেয়র কামাল হোসেন শেখ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, সাবেক পৌর মেয়র এইচএম অহিদুল ইসলাম, রামশীল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোকন বালা ও কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ সলিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

গত মঙ্গলবার বিকালে কোটালীপাড়ার রামশীল বাজার এলাকায় পুলিশের এক এসআই স্থানীয় কৃষক নিখিল তালুকদরকে (৩২) পিটিয়ে জখম করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বুধবার ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।  

এই ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিখিলের স্বজনরা জানান, বৈঠকে নিখিলের পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি তি লাখ টাকা ৫/৬ দিনে মধ্যে দেওয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার ও ছোট ভাই মন্টু তালুকদারকে চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়।

নিখিলের ভাই শংকর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “যে যাওয়ার সে চলে গেছে। পরিবারের কথা ভেবে ও পরিবারের সবাই ভালো থাকতে পারে সেজন্য মীমংসায় সম্মত হয়েছি। দুই লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি তিন লাখ আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে দেবে। পরিবারের দুইজনকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছে।”

এ ব্যাপারে নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার বলেন, “চাকরি না দিলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শেষ হলে আমরা অভিযোগ দায়ের করব।”

কোটালীপাড়ার রামশীল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোকন বালা বলেন, “আমি এ সভায় উপস্থিত ছিলাম। সভায় নিখিলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে পুরো ঘটনা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। সালিশ বৈঠক থেকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি তিন লাখ টাকা ৫/৬ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এছাড়া  নিখিলের স্ত্রী ও ছোট ভাইকে চাকরি দেওয়া হবে বলেও সেখানে উপস্থিত থেকে শুনেছি।”

পুলিশের পক্ষ থেকে এ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।  

কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, “নিখিলের স্মরণে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভার শুরুতে আমি ছিলাম। শোকসভা চলাকালে আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে কী হয়েছে তা আমি জাননি না।”

এদিকে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) আসলাম খানকে প্রধান করে শুক্রবার রাতে তিন সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ও কোটালীপাড়া সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির প্রধান আসলাম খান বলেন, “এ ঘটনার মীমাংসার বিষয়টি ব্যক্তিগত। যে কেউ এটা করতে পারেন। এটি আমাদের তদন্ত বহির্ভূত বিষয়। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তা কী কী আইন লংঘন করেছেন; কী কী অপরাধ করেছেন। আমরা মাঠে নেমে তদন্ত করছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ করছি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। আশা করছি  ৩/৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব।”

তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে; সালিশ মীমাংসা করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

গোপালগঞ্জ জেলা সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, “এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি দোষী পুলিশ কর্মকর্তাকে রক্ষায় তৎপর অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালে রামশীল বাজারের ব্রিজের পাশে স্থানীয় চারজন তাস খেলছিলেন। ওই সময় কোটালীপাড়া থানার এক এএসআই দুই যুবককে সিঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। তারা আড়ালে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে তাস খেলার দৃশ্য ধারণ করেন। এটি টের পেয়ে তিন জন পালিয়ে গেলেও নিখিলকে ধরে ওই এএসআই মারপিট করেন। আহত নিখিলকে প্রথমে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। বুধবার সেখানে তার মৃত হয়।

কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফার রহমান বলেন, নিখিলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।