লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি নিহত: ভৈরবেও ৪ জন গ্রেপ্তার

লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১১ জন আহত হওয়ার ঘটনায় মাদারীপুরের পর কিশোরগঞ্জেও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। 

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 12:28 PM
Updated : 3 June 2020, 12:28 PM

মঙ্গলবার রাতে ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক রফিউদ্দিন যোবায়ের জানান।

এরা হলেন ভৈরবের শম্ভুপুর গ্রামের হেলাল মিয়া ওরফে হেলু (৪৫), তাতারকান্দি গ্রামের খবির উদ্দিন (৪২), লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহিদ মিয়া (৬১) এবং শম্ভুপুর গ্রামের মুন্নি আক্তার রুপসী (২৫)।

এর আগে মাদারীপুরে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২৮ মে লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্র ও তাদের সহযোগীদের গুলিতে বাংলাদেশে ২৬ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।

হাতহতদের মধ্যে ভৈরব উপজেলার ছয়জন নিহত ও চারজন আহত রয়েছেন বলে জানান গেছে।

এই ঘটনায় ৩১ মে ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মোবারক হোসেন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। বাদী মোবারক হোসেন লিবিয়ায় নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের (২৫) এর বড় ভাই।

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রফিউদ্দিন যোবায়ের বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে হতাহতদের মধ্যে ভৈরবের ৬ জন নিহত ও ৪ জন আহত আছেন।

“এই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গতকাল [মঙ্গলবার] রাতে মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত তিন দালাল এবং সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়।”

এ সময় তাদের কাছ থেকে মানবপাচার সংক্রান্ত কিছু কাপজপত্র উদ্ধার করা হয় বলেও তিনি জানান।

রফিকউদ্দিন বলেন, আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে ‘মানবপাচারকারী চক্রের হোতা কুখ্যাত দালাল তানজিরুল ওরফে তানজিদসহ আটক হেলাল মিয়া ওরফে হেলু, খবির উদ্দিন এবং শহিদ মিয়াসহ অন্যান্য দালালদের মাধ্যমে নিহত সাকিব, আকাশ, শাকিল এবং আহত সোহাগ প্রত্যেকে চার লাখ টাকা এবং নিহত মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব এবং আহত জানু মিয়া জন প্রতি তিন লাখ টাকা দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়া যান।

“এছাড়া নিহত রাজন চন্দ্র দাস মানব পাচারকারী চক্রের অপর সহযোগী জাফর ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার রুপসীর মাধ্যমে চার লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যান।” 

রফিউদ্দিন যোবায়ের বলেন, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারা লিবিয়া যান। পরে ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে দালাল চক্র তাদের স্বজনদের কাছ মুক্তিপণ দাবি করে। এ নিয়ে দুপক্ষের বাকবিতণ্ডার মধ্যে পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মোবারক হোসেনের মামলার আসামিরা হলেন ভৈরবের শ্রীনগর পূর্বপাড়া গ্রামের তানজিরুল ওরফে তানজিদ, তার বড় ভাই বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারি, তানজিরুলের ভাতিজা নাজমুল, মৌটুপি গ্রামের জবুর আলী, লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাফর, শম্ভুপুর গ্রামের স্বপন ও গোছামারা গ্রামের মিন্টু মিয়া।

তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারিকে মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ আটক করে এবং পরদিন [১ জুন] আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এই ঘটনায় মাদারীপুরের নিহত তিনজনের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মোট ১৪ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা হয়েছে এবং দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।   

গ্রেপ্তাররা হলেন রাজৈর উপজেলার জুলহাস সরদার এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার দিনা বেগম।