শনিবার বিকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অসময়ের ঢলে হতভম্ভ হয়ে পড়া কৃষকরা আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছে।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির তথ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। সেই পানি ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এছাড়া এ অঞ্চলের বৃষ্টির পানি যোগ হওয়ায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
“এতে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।”
তবে এ মুহূর্তে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা সাময়িক। পানি কমতে শুরু করেছে। ৩/৪ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।“
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের দুধকুমার নদের পূর্ব পারে আলোরচর, চর রাউলিয়া, রসুলপুর, যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা, খাসের চর, গোয়ালপুরি, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আইরমারী, মশালের চর, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীর চর, চর কাফনা, কালিগঞ্জ ইউনিয়নের কাঠগিরা, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরের দুই শতাধিক ছোট-বড় চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আধা পাকা বোরো ধানের ক্ষেত ডুবে যাচ্ছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কোথাও এক বুক কোথাও কোমর পানিতে নেমে আধা পাকা ধান কাটছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ব্যাপারীর চরের মিজানুর রহমান বলেন, “চরের ৯৫ ভাগ মানুষ দিনমজুর, জেলে। করোনার সময় সগাই বাড়িতে বসে, কাম নাই-কষ্টে আছে। এর মধ্যে ঝড়, শিলাবৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করে গেল। এখন আসছে পানি। ধান ডুবায় দিল। কেউ দেখপার আসলো না চরের মানুষের কষ্ট গো-ভাই।“
রাউলিয়ার চলের মোশারফ হোসেন ছোট ডিংগি নৌকায় নিয়ে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “ধান কেবল পাকপার ধরছিল। ফলন খুব ভালো হইছিল। ডুবি গেইছে। এগলা ধান থাকি চাউল হবে না। চিটা হবে। কাটি নিয়া যাবার নাগছি গরুক খাওয়ামো।”
এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েছে এখানকার অনেক কৃষক।
ব্রক্ষপুত্র নদের অববাহিকায় চর গোয়ালপুর, রলাকাটা ও খাসের চরে গিয়ে দেখা যায়-ব্রক্ষপুত্র ভারত থেকে এ এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেছে। নদ ফুলে-ফেপে উঠেছে।
গোয়ালপুরি চরের জেলে শাহ আলম বলেন, “নদীতে মাছ মারি কোনো রকমে সংসার চালাই। দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধান-২৯ লাগাইছি। ফলনও ভালো হছিল।
“হঠাৎ পানি আসি সউগ ডুবে গেইছে।”
ভগবতির চরের চরের সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এই চরের নিচু এলাকার আউস, বোরো আর চিনাসহ সবজির ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানি যে হারে বাড়ছে তাতে ঘর বাড়িতে পানি উঠতে বেশি সময় লাগবে না “
চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, একটার পর একটা চরে পানি উঠছে। মনে হচ্ছে এবার আগাম বন্যা হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, চরাঞ্চলের মানুষ দেরিতে ধান লাগায়, দেরিতে ধান কাটে। কিছু এলাকার ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
“এখনও পর্যন্ত পুর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য আমার হাতে পৌঁছেনি।”