জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ কয়রায়

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনার কয়রা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই বাঁধের উপর হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়েছেন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2020, 03:48 PM
Updated : 26 May 2020, 12:54 PM

কয়রা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের অন্তত ছয় হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের উপর হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন।

ঈদের নামাজে ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও কয়রা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর খুলনা দক্ষিণ জেলা শাখার সাবেক আমীর।

উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, “এবার অন্যরকম এক ঈদ উদযাপন করছি আমরা। স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসে জোয়ারের পানি যখন হাঁটুপানি পর্যন্ত পৌঁছায় তখই শুরু হয় ঈদের নামাজ। প্রায় ছয় হাজার মানুষ নামাজে অংশ নিয়েছেন।”

শফিকুল কয়রা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি চেয়ারম্যান হন।

তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সবার জন্য ঈদের সেমাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া দুপুরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়।”

কয়রা একটি নদীবেষ্টিত উপজেলা। এর পূর্বপাশে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শাকবাড়িয়া নদী; দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ এবং উত্তর পাশে রয়েছে কয়রা নদী।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, আইলায় বিধ্বস্ত কয়রা আম্পানে আরও মুখ থুবড়ে পড়েছে। কয়রার চারটি ইউনিয়নের সমগ্র এলাকা লোনা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এই জনপদের মানুষ এখন স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণে নেমেছেন।

“তারা এবার ঈদের দিন বাঁধের ওপরই নামাজ আদায় করে সেমাই খেয়ে আবার বাঁধ মেরামতের কাজে নেমে পড়েন। দুপুরে তাদের জন্য খিচুড়ির আয়োজন করা হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুদ্দৌলা লিঙ্কন বলেন, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়রায় আসেন এবং এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সে সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকায় টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ  নির্মাণের।

“তারপর কয়রা এলাকায় বাঁধ নির্মাণে প্রতিবছরই অর্থ বরাদ্দ হয়; কিন্তু এ অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হয় তা মনিটরিং করার কেউ নেই।”

 

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, “কয়রার মানুষ বাঁধ মেরামত না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।

বাঁধ আটকাতে না পারলে লোনা পানির মধ্যে বসবাস করা কঠিন হবে। কয়রার মানুষ এখন ত্রাণ চায় না, বাঁধ চায়। তাই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে নেমেছি আমরা।”

ইমতিয়াজ বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও তাদের পেটে দানাপানি প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসন সেটুকুর জোগান দিয়ে লোনা পানিতে বিধ্বস্ত মানুষগুলোকে উৎসাহ দিচ্ছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছে। আম্পানের আঘাতে সেই যুদ্ধ আবার নতুনভাবে শুরু হলো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, আইলার পর ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ-১’-এর আওতায় খুলনাসহ উপকূলীয় ৬২৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনঃনির্মাণে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প’ (দ্বিতীয় পর্যায়), ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার দাকোপে ৩১ নম্বর পোল্ডার এবং বটিয়াঘাটায় ৩০ ও ৩৪/২ পোল্ডারে বাঁধ পুনঃসংস্কার কাজ করা হয়েছে।

“কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধ নিয়ে মানুষের আতঙ্ক কমেনি।”