উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ মনিটরিং দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘূর্ণিঝড় মূলত পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে গেছে। তারপরও আমাদের অনেক বেড়িবাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আম্পানের কারণে পুরো উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
“এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বরিশাল ও চট্টগ্রামেও বেশি কিছু জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বহু বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।”
ঝড়ে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় বাঁধ ভেঙে ও উপচে জলোচ্ছ্বাসের পানি গিয়ে মাছের ঘের এবং ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আনিচুর রহমান জানিয়েছেন।
“সবগুলো উপজেলা মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে আমরা ১৮ থেকে ২০ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। এর বাইরে মাছের ঘের প্লাব্তি হয়ে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি জানান, কয়রা উপজেলায় ১১টি পয়েন্টে উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চারটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ঝড়ে অর্ধেকের বেশি কাচা ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
দাকোপে বাঁধ ভেঙেছে দুই পয়েন্টে। এছাড়া কয়েকটি জায়গায় বাঁধ উপচে জলোচ্ছ্বাসের পানি গিয়ে ১০ থেকে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পাইকগাছায় ২/৩টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে চারটি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। ডুমুরিয়ায় দুটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে দুটি ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। আর বটিয়াঘাটায়ও দুটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
খুলনার পাশের সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটেও ঝড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে চার হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে এবং তিন শতাধিক বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে চার হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছেন বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক জানিয়েছেন।
অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানলে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হত বলে মন্তব্য করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসীন
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আম্পান সরাসরি আঘাত করেছে পশ্চিমবঙ্গে, এর আইয়ের (চোখ) একটি সাইড কেবল আমাদের পাশ দিয়ে গেছে। এটিও আবার সুন্দরবন দিয়ে লেগে গেছে।
“যদি সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানত তাহলে তো ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যেত। এখনও যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার চেয়েও আমরা বড় ধরনের একটা ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছি।”
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বলেন, “আম্পান বিধ্বংসী আকারে আসার যে একটা আশঙ্কা ছিল সেইভাবে না আসাতে আমাদের বন ও বন্য পশুর তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে মনে হচ্ছে। যদিও এখনও আমরা পুরোপুরি সেই হিসাবটা করতে পারিনি। এর জন্য আমাদের কিছু সময় লাগবে।”
সুপার সাইক্লোন আম্পান কিছুটা শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। কলকাতার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার সময় এর বাতাসের তীব্রতা ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটারের মতো।
আম্পানের চোখের বর্ধিতাংশ বুধবার রাতে বাংলাদেশ উপকূলে প্রবেশ করে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় সাতক্ষীরায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫১ কিলোমিটার। খুলনা, বাগেরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও এ সময় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
তবে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়, আম্পান বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এই ঘূর্ণিঝড় স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
যশোর-ঝিনাইদহ পেরিয়ে এটি এখন দেশের উত্তরাঞ্চেলে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। দিনভর এর প্রভাবে বৃষ্টি থাকবে। আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে তা অস্তিত্ব হারাবে।