করোনাভাইরাস জয়ী এক পরিবারের গল্প

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক পরিবারের পাঁচ নারীর সেরে ওঠার কথা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে জানানো হয়েছে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2020, 11:46 AM
Updated : 2 May 2020, 11:49 AM

করোনাভাইরাস জয়ী ওই পরিবারের সদস্যদের স্বাগত জানাতে শনিবার বেলা ১২টার দিকে তাদের বাড়ি যান করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান।

পরিবারের সদস্যদের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিবারটিকে করোনাভাইরাসমুক্ত ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান বলেন, “মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিবারটিকে করোনাভাইরাসমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কারণ গ্রামবাসী যাতে তাদেরকে অবহেলার চোখে না দেখে।”

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রথম আক্রান্ত পোশাক শ্রমিক তরুণী ও তার পরিবার করোনাভাইরাস জয়ের পর প্রশাসনও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

দুপুরে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের দপ্তরে যান ওই গার্মেন্টসকর্মী। তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ উপহার দেন ইউএনও।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, উপজেলার আঠারবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন এলাকার উত্তরবনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ওই পরিবারের কর্তা চার বছর রোগে ভুগে ১১ মাস আগে মারা যান। তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে যান তিনি।

পরিবারটির কথা তুলে ধরতে গিয়ে ইউএনও জানান, অসুস্থ বাবা অক্ষম হয়ে পড়ায় অভাবের সংসারের হাল ধরে ওই পরিবারের বড় মেয়ে (২০)। তিন বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের এক পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছেন তিনি। একা সংসারের ভার সামলাতে হিমশিম খাওয়ায় বছর খানেক আগে তার ছোট বোনও (১৮) পোশাক কারখানায় যোগ দেন। টাকা উপার্জন করে বাবাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা ছিল দুই বোনের।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশ অবরুদ্ধ হলে পোশাক কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। গত ৭ এপ্রিল বাড়িতে চলে আসেন তারা। বাড়ি ফেরার পর হাল্কা জ্বর আসায় স্থানীয় বাজারের এক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান বড়মেয়েটি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ থেকে আসায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ১১ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের করোনাভাইরাস ইউনিট তার নমুনা সংগ্রহ করে। পরদিন ফলাফলে তার করোনাভাইরাসভাইরাস শনাক্ত হয়। তাকে বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়।

একই সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগের টিম। ১৬ এপ্রিল তার ১০ বছর বয়সী বোনসহ দুই বোন, ফুফু ও চাচির শরীরেও করোনাভাইরাসভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই অবস্থায় ওই চারজনকে তাদের বাড়িতেই আইসোলেশনে রেখে স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসা দেয়।

একই পরিবারের এ পাঁচ সদস্যর আরো দুই দফা পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষায় শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি না পাওয়ায় শনিবার তাদের করোনাভাইরাস জয়ী ঘোষণা করা হয়।

বড়বোনটিকে শনিবার সকালে ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতাল থেকে এবং বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া চারজনকে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়পত্র দেয়।

ওই পোশাক শ্রমিক জানান, শুরু থেকেই তার শরীরে করোনাভাইরাসভাইরাস আছে বিশ্বাস করতেন না তিনি।

ঘটনা জানাজানি হলে অনেকে ফোন করায় তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি জানান, তবে দৃঢ় মনোবল নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ঠিকমতো ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়েছেন তিনি।