স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়, বগুড়ায় আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ও সেশন ফির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে বগুড়ায় রাস্তায় নেমেছেন অভিভাবকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2019, 05:21 PM
Updated : 29 Dec 2019, 05:22 PM

রোববার দুপুরে তারা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

অভিভাবকদের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ।

স্মারকলিপি দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, যুব ইউনিয়ন, জাতীয় যুব জোট, যুব মৈত্রী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একই দাবিতে শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল বের করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বটতলায় সমাবেশের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিতে যান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি এবং সেশন ফি নির্ধারণ করে প্রায় এক বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে।

তাতে রাজধানী ঢাকা, ঢাকার বাইরে অন্য মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর এবং উপজেলা এলাকায় এমপিওভুক্ত ও আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন ফরম, ভর্তি ফি ও সেশন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

তাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এছাড়া জেলা সদরে সেশনসহ ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে তা এক হাজার টাকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

কিন্তু বগুড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি-এর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় অব্যাহত রাখে।

এর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ চলতি বছরের মাঝামাঝি হাই কোর্টে একটি রিট করেন।

তাতে অভিযোগ করা হয়, বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি-এর নামে দুই থেকে সাত গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে।

রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সেশন ফি-এর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ এবং ইতিপূর্বে আদায় করা অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

শুনানি শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর এক আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ফি-এর বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইতিপূর্বে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেয়।

আদালতের আদেশের পর আব্দুল মান্নান আকন্দ গত ২৪ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দাবি জানান। অন্যথায় অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তিনি।

এরপর বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর শহরের একাধিক স্থানে সমাবেশ করে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিপি) বগুড়া জেলা সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি মাহমুদুস সোবহান মিন্নু, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন, যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সভাপতি সাজেদুর রহমান ঝিলম, জাতীয় যুব জোটের জেলা সভাপতি ওবায়দুল হক, যুব মৈত্রীর জেলা সভাপতি তাইজুল ইসলাম রোম, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সভাপতি নাদিম মাহমুদ, জাসদ ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি ওমর ফারুক ও ছাত্র মৈত্রী জেলা সভাপতি মহিদুল ইসলাম সোহেল।

স্মারকলিপি গ্রহণের পর বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ আন্দোলনকারীদের বলেন, নির্ধারিত ফি গ্রহণের বিষয়ে যেহেতু আদালতের নির্দেশনা রয়েছে তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়ে বলেছেন তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপরেও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান আদালতের আদেশ অমান্য করে তবে তারা পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।