রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজে চাঁদা দাবির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল স্কুলের ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 06:00 PM
Updated : 15 Dec 2019, 06:00 PM

এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দাবি, চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান ছাত্রলীগ নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জুবেরি মাঠে ১ দশমিক ৩ একর জায়গা জুড়ে ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল স্কুল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ৩০ জুলাই। কাজের দায়িত্বে আছে শিকদার কন্সট্রাকশন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকার বাসিন্দা মমতাজউদ্দীন (ডন) নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়কের কাজ করছেন।

মমতাজউদ্দীনের অভিযোগ, গত ৫ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান এই স্কুলের চারতলা ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ৩০ জুলাই তিনি নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

“৩১ জুলাই প্রথমবারের মতো ‘ছাত্রলীগের’ লোক সাইটে এসে ঝামেলা করে। এরপরেও তারা কয়েকবার আসে।”

তিনি বলেন, এসব কারণে তিনি ১০ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তাদের কাছে জানতে চান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কেন সাইটে এসে ঝামেলা করছেন।

“ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক আমাকে বলেন- শোনেন ভাই, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা করছেন; আমাদের সঙ্গে মিটমাট না করলে হবে না।”

এ সময় তারা মমতাজউদ্দীনের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে তিনি অভিযোগ করছেন।  

মমতাজউদ্দিন বলেন, তিনি এই ব্যাপারে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এবং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) খন্দকার শাহরিয়ার রহমানের কাছে অভিযোগ করেন।

তার অভিযোগ, এরপরও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে সাইটে এসে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করতে থাকেন।

“আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ ওরফে বৃত্তসহ দুইজন সাইটে এসে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যবস্থাপকের (ম্যানেজার) খোঁজ করেন। আশরাফুলকে না পেয়ে তারা আবু বকর নামে এক ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।”

তিনি বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে তারা ফের এসে আশরাফুলকে মোটরসাইকেলে করে ডিনস কমপ্লেক্সের পিছনে নিয়ে যান। সেখানে তারা আশরাফুলকে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে টাকার বিষয়টি মিটমাট করতে মমতাজউদ্দিনকে বলতে বলেন। এর আগ পর্যন্ত তারা কাজ বন্ধ রাখতে বলেন।

ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি কোনো অভিযোগ করছি না, তারা চাঁদা দাবি করেছিল। এজন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।”

তাকে ডিনস কমপ্লেক্সে ধরে নেওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

এ ঘটনার পর স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন জানিয়ে মমতাজউদ্দিন বলেন, “শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।”

তিনি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান।

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। আমি আজ ক্যাম্পাসেই ছিলাম, কিন্তু সেখানে (প্রকল্পসাইটে) যাইনি। আমাকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারে। আমি নিজেও খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে মামলা করব।”

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “তিনি (মমতাজউদ্দিন) সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আরও কাজ হচ্ছে, সেগুলোতে তো কখনও যাইনি। আমরা বিষয়টি উপাচার্যকেও জানিয়েছি।”

অভিযোগের বিষয়ে সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “আমরা চাঁদাবাজির বিষয়ে কিছু জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ধরনের অভিযোগ ছড়াচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। যে ম্যানেজার এই অভিযোগ করেছে, নিশ্চয় এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। ছাত্রলীগকে হেয় প্রতিপন্ন করায় তার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যেই মামলা করা হবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমাদের কী করার আছে বলেন! যা করার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করবে। আমার কাছে আজকেও অভিযোগ করেছে। আমি উপাচার্যকে জানিয়েছি।”

উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উপাচার্য দপ্তরের সচিব মীর শাহ্জাহান আলী বলেন, “আজকে মমতাজউদ্দিন এসে অভিযোগ করেছেন। আমি বিষয়টি উপাচার্য অবহিত করেছি।”

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার রহমানকে পাওয়া যায়নি।