সাভারে জনবসতিতে অবৈধ ইটভাটা

আইনের তোয়াক্কা না করেই রাজধানীর পাশে সাভারেই জনবসতির কাছে ও কৃষিজমিতে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা গড়ে ওঠার খবর পাওয়া গেছে।

সেলিম আহমেদ সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2019, 04:41 AM
Updated : 3 Dec 2019, 06:10 AM

এসব ইটভাটা সংশ্লিষ্টের কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভাটাগুলোর পরিবেশের ছাড়পত্রসহ কোনো অনুমোদন নেই।

সরকারি হিসাবে ঢাকা জেলায় ইটভাটা রয়েছে ৫৩৭টি; যার মধ্যে বৈধ মোটে ২৭১টি এবং অবৈধ ইটভাটা ২৬৬টি।

টিবিসি ব্রিকস ফিল্ডের ব্যবস্থাপক দীলিপ সাহা স্বীকার করেন তাদের ভাটার লাইসেন্স রিনিউ করা হয়নি, এমনকি পরিবেশের ছাড়পত্রও নেই।

ভাটা ঘেঁষে অসংখ্য বসতবাড়ি এবং দুটি মাদ্রাসা থাকলেও তিনি দাবি করেন তাদের ভাটায় কালো ধোঁয়া বের হয় না, আর যা ধোঁয়া বের হয় তা ১২০ ফুট উঁচু চিমনির উপর দিয়ে যায় ফলে পরিবেশ দূষণ হয় না।

কর্ণফুলী ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমানের দাবি ঘনবসতি এলাকায় ইটভাটা রয়েছে কিন্তু পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

লাইসেন্স কিংবা পরিবেশের কোন ছাড়পত্র না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “তাছাড়া এলাকায় কেউ এখনও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এমন কথা বলেনি।”

ভাটার পাশে জামিয়া ইসলামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসা।

দূষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এর প্রিন্সিপাল মাওলানা ওয়াক্কাস নোমানী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ইটভাটার ধোয়ায় পরিবেশ দূষণ হলে কী করব? তারা কি আমাদের কথা শোনে?

তারপর বলেন, “এলাকায় থাকতে হলে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে থাকতে হয় “

অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

গত সপ্তাহে রাজধানীর বায়ু দূষণ কমাতে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

এরপর অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নামে প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার ধামরাই উপজেলার অবৈধ পাঁচটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে ভাটাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “পরিবেশ দূষনকারী অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমার অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

তবে হাই কোর্টের নির্দেশনা প্রসঙ্গে টিবিসি ব্রিকস ফিল্ডের ব্যবস্থাপক দীলিপ সাহা বলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে ইটভাটা অন্যত্র নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

“প্রয়োজনে ভাটা বন্ধ করে দিব।”

সাভার উপজেলার ভাকুর্তা এলাকায় এমটিবি ব্রিকস, এবিএন ব্রিকস, তাহা ব্রিকস রয়েছে। এছাড়া সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লায় টিবিসি ব্রিকস, কর্নফুলি সুপার ব্রিকস, চাঁন এন্ড ব্রিকস, আশুলিয়ার সনি ব্রিকস, তুরাগ ব্রিকস, ঋতু ব্রিকসসহ অনেক উটভাটা রয়েছে।

এসব বেশিরভাগ ইটভাটায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের দানা (গুড়া) পোড়ানোর অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

এলাকার কয়েকজন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে পৌরসভার ঘনবসতি এলাকায় এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানীয় ইটভাটার মালিক কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন।

এদিকে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকার অবৈধ ইটভাটা দ্রুত উচ্ছেদ কোর দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।