‘অবহেলায়’ প্রসূতির মৃত্যু, চিকিৎসক গ্রেপ্তার

চিকিৎসার অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে যশোরের বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 05:58 AM
Updated : 16 Nov 2019, 05:58 AM

শনিবার কোতয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় নিহতের স্বামীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামি ড. পরিতোষ কুমার কুণ্ডু এবং শহরের ‘বন্ধন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এর ব্যবস্থাপক আক্তারুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের আগেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছিল।

মামলার অপর আসামি কুইন্স হসপিটালের নার্স সুরাইয়াকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

যশোর শহরের পালবাড়ি গাজিরঘাট এলাকার ইসমাইল হোসেন হিরুর স্ত্রী ময়না খাতুনকে (২৬) সন্তান প্রসবের গত বৃহস্পতিবার সিজার করার কিছুক্ষণ পর মারা যান। এতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে নিহতের স্বামী থানায় মামলা করেছেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে গিয়ে নিহতের ভাই শিমুল পারভেজ বলেন, “সন্তানসম্ভবা আমার বোনের ব্যথা ওঠায় গত বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যায় শহরের কুইন্স হসপিটালে নিয়ে যাই।

কুইন্স হসপিটালের নার্স সুরাইয়া তাদের ‘পাশের বন্ধন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঢাকা থেকে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ আসার কথা জানিয়ে ‘সেখানে গেলে ভাল হব ‘ বলে পরামর্শ দেন।

“সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে নিয়ে বন্ধনে যাই। সেখানকার ডাক্তার পরিতোষ কুমার কুণ্ডু ‘রোগীর অবস্থা ভাল না, এই মুহূর্তে তার সিজার করা লাগবে” বলে জানান।’

“ছয় মাস আগে আল্ট্রাসনো করা ছিল। ডেলিভারি ডেট আরও তিন দিন বাকি ছিল কিন্তু ডাক্তার নতুন করে কোনও আল্ট্রাসনোসহ কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আমার বোনকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওটিতে নিয়ে যান। এমনকী তিনি বন্ড সইও করাননি।

“সিজার করেই ডাক্তার বেরিয়ে চলে যান। ২০-২৫ মিনিট পরেই বোনের খিঁচুনি ওঠে এবং তিনি মারা যান।”

নিহতের ভাই পারভেজ অভিযোগ করে বলেন, “সিজার শেষে আমার বোনের অবস্থা যখন খুব খারাপ তখন নার্সরা আমাদের রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। এক ব্যাগ রক্ত আনা হয়।

“পরে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নার্সরা আরও কয়েকটি ইনজেকশন এবং রক্ত আনার কথা বলেন কিন্তু সেসময় আমার দুলাভাই বোনের হাত-বুক পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি আর বেঁচে নেই।

“অথচ হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা মৃত অবস্থায় বোনের শরীরে ইনজেকশন এমনকি তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা ৩-৪ মিনিটের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ম্যানেজ করে ফেলে।”

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “বন্ধনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলামকে বিষয়টি জানালে তিনি উল্টো ‘লাশের ময়নাতদন্ত আরেকজন ডাক্তারই করবেন। সেকারণে মামলা মোকদ্দমা করে কোনও লাভ নেই’, বলে আমাদের হুমকি দেন।”

একস পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে থানায় বিষয়টি জানান তারা।

যশোর কোতয়ালি থানার পরিদর্শক তাসমীম আলম বলেন, “রোগীর মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা ওই হাসপাতালে যাই। এরপর সেখানকার ডাক্তার ও ব্যবস্থাপককে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।”

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই ড. পরিতোষ কুমার কুণ্ডু ও হাসপাতালের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানকে পুলিশ থানায় জিজ্ঞাসবাদের জন্য নিয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রেপ্তারের আগে ডা. পরিতোষ বলেন, “রাত ১০টার দিকে সিজার করা হয়। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। অতিরিক্ত ব্লিডিংও হয়নি। অপারেশনের পর সেলাই করে দিয়ে আমি চলে যাই।

“এরপর তাকে পরিষ্কার বেডে দেওয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর আমাকে ফোনে জানানো হয়, ‘রোগীর অবস্থা খারাপ।’

এ সময় তিনি ‘ইমার্জেন্সি কিছু ড্রাগ ব্যবহারের কথা বলেন’ বলে জানান তিনি।

“আমরা যা করণীয় তা করেছি। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।”

আট বছর ব্যবাবধানে সন্তান সম্ভাবা হওয়ার উল্লেখ করলেও ‘শ্বাসকষ্টের কারণে মারা গেছেন’ বলে দাবি করেন।