হাওরের বিপুল উন্নয়ন রক্ষা করতে হবে: রাষ্ট্রপতি

হাওরের বিপুল উন্নয়ন ও সুন্দর পরিবেশ রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2019, 05:58 PM
Updated : 11 Oct 2019, 06:16 PM

শুক্রবার বিকালে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি বেঁচে থাকতে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। হাওরের বিপুল উন্নয়ন ও সুন্দর পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।”

একটি চক্র হাওরের জমিজমা কিনে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিগত বছরগুলোয় প্রত্যাশার বাইরে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে হাওরে। হাওরের মত প্রত্যন্ত এলাকায় ডুবোসড়ক, সারা বছর চলাচল উপযোগী সড়ক, ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কথা হাওরবাসী একসময় ভাবতেও পারত না। আজ এ সবই বস্তবে পরিণত হয়েছে। কাজেই এ উন্নয়ন রক্ষা করতে হবে।

“উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে হাওরবাসী। অন্যদিকে একটি চক্র হাওরের জমিজমা কিনে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। কাজেই কোনো কোম্পানি যেন হাওরে জমি কিনে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে। আমি বেঁচে থাকতে কাউকে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেব না। সেটা যতবড় শক্তিই হোক না কেন।”

হামিদ বলেন, “ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের সঙ্গে সারাবছর চলাচল উপযোগী যে রাস্তা হয়েছে, সেটা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। হাওরের উপজেলাগুলোকে শহরের মত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সাজানো হবে। কিন্তু এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে।

“হাওরের কোনো কৃষিজমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেকে আইন না মেনে হাওরের কৃষিজমির যেখানে-সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না।”

আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দেন।

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে মিঠামইনে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, “একসময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াশোনা করত না। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাজা শেষে লাশ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হত। এখন আর সেই অবস্থা নেই।”

তিনি রাজনৈতিক নেতাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, “মানুষের সঙ্গে ভাল আচরণ করতে হবে। দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড়া হবে না। আমার নিজের লোকজন হলেও তাকে ক্ষমা করা হবে না।”

এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারে করে মিঠামইন পৌঁছালে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর গ্রামের বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা মো. তায়েব উদ্দিন ও মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন।

বিকেল ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক কলেজ প্রাঙ্গণে স্থানীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত এ সমাবেশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলম (রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বোন), কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আজিজুল হক, রাষ্ট্রপতির ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক নূরু, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার রাষ্ট্রপতি মিঠামইনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করবেন। তারপর বিকেলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুদান ও শিক্ষাবৃত্তি দেবেন। একই সঙ্গে গরিব নারীদের স্বাবলম্বী করতে বেশ কিছু সেলাই মেশিন দেবেন।

সাত দিনের সফরে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ আসেন। ১৫ অক্টোবর তিনি ঢাকা ফিরে যাবেন।