নুসরাত হত্যার আসামি মা হলেন কারাগারে

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার কারাবন্দি এক আসামি মা হয়েছেন।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2019, 03:03 PM
Updated : 21 Sept 2019, 03:03 PM

শুক্রবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কন্যা সন্তানের মা হন কামরুন নাহার মনি।

স্বাভাবিক প্রসব হওয়ায় মা ও শিশু দুজনই সুস্থ রয়েছে বলে ফেনী কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কামরুন নাহার মনি সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় যারা ছিলেন তাদরে মধ্যে মনিও ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।

ফেনী জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম বলেন, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কামরুন নাহার মনির প্রসব বেদনা শুরু হলে কারাগার হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ফেনী জেনারলে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

“ফেনী মডেল থানা পুলিশ ও কারাগারের একাধিক কারারক্ষীর (পুরুষ ও মহিলা) তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলে পুনারায় তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।”   

নুসরাত হত্যা মামলায় বাদীর আইনজীবী এম শাহজানান সাজু বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম (কিলিং মিশনের ৫ জনের একজন) আসামি কামরুন নাহার মনিকে গত ১৬ এপ্রিল বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গ্রেপ্তারের সময় মনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরদিন ১৭ এপ্রিল মনিকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার সময় ব্যবহৃত বোরকাগুলো যে দোকান থেকে কেনা হয়েছিল আসামি মনিকে নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল সে দোকানে অভিযান চালায় পিবিআই।

আইনজীবী এম শাহজানান সাজু বলেন, নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২০ এপ্রিল আসামি কামরুন নাহার মনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

“ঘটনার সময় বোরকা পরিহিত ৫ জনের মধ্যে একজন ছিলেন মনি। নুসরাতকে হাত-পা বাধার পর আসামি মনি সহপাঠী নুসরাতকে ছাদে শুইয়ে দিয়ে গলা চেপে ধরেন। আসামি জাবেদ হোসেন ওই সময় নুসরাতের গায়ে এক লিটার কেরোসিন তেল ঢেলে দেন এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।”

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর জের ধরে গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। এরপর টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সিরাজ উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে  মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর হয়। গত ১০ এপ্রিল মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, কামরুন নাহার মনিসহ ১২ জন আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম তদন্ত শেষে গত ২৯ মে নুসরাত হত্যায় ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়।

ফেনী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহমেদ জানান, নুসরাত হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক চলছে। রোববার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

চলতি সপ্তাহে মামলার বিচারকাজ শেষ হবে বলে পিপি আশা করছেন।