ছেলের অট্টালিকায় ঠাঁই নেই বৃদ্ধা মায়ের

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজের তিনতলা ভবনে থাকেন মরিয়ম বেগমের একমাত্র ছেলে কিরন শিকদার। কিন্তু মরিয়ম বেগমের স্থান ওই তিনতলা ভবনে হয়নি।

বেনজির আহমেদ বেনু নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2019, 02:36 PM
Updated : 23 June 2019, 02:36 PM

পাশের মহল্লায় একটি টিনের ঘরে স্থান হয়েছে নবতিপর এই বৃদ্ধার।

স্ত্রী চান না বলে ছেলে মাকে নিজের কাছে রাখতে পারেন না বলে মরিয়ম বেগমের ভাষ্য।

মরিয়ম বেগম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পলাশ বাজার এলাকার মৃত মজনু মিয়ার স্ত্রী। ২০ বছর আগে মারা যান স্বামী মজনু মিয়া। তার একমাত্র ছেলে কিরন শিকদার স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ও ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

গত রমজান মাসে মরিয়ম বেগমকে বাড়ি থেকে নতুন বাজার এলাকায় একটি ভাঙ্গা টিনের ঘরে এনে তুলেছেন কিরন। সেখানে গিয়ে ছেলে মাঝেমধ্যে কিছু বাজার-সদাই কিনে দেন ছেলে। ছেলে মাঝেমধ্যে এলেও ছেলেবউ কিংবা নাতি-নাতনিরা তাকের দেখতেও আসেন না। বৃদ্ধা মরিয়মের দেখাশোনা করেন প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা।

স্থানীয়রা বলেন, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন আনুমানিক ৯৫/৯৭ বছর বয়সী মরিয়ম বেগম। লাঠিতে ভর দিয়ে কোনোরকমে হাঁটতে পারেন। একা একা খারাপ লাগলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটান।

তার থাকার ঘরে রয়েছে একটি পুরোনো তোষক, কয়েকটি থালাবাসন।

মরিয়ম বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কিরন বড়। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে কিরন শিকদার সাজ ডেকারেটর নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। পলাশ বাজার এলাকায় তিনতলা একটি নিজস্ব ভবনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

মরিয়ম বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলের বউ আমাকে তাদের সাথে রাখতে চায় না। তাই ছেলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। ছেলে মাঝেমধ্যে এসে আমাকে বাজার-সদাই করে দিয়ে যায়। আর এভাবেই দিন পার করছি।”

একা একা এখানে থাকতে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকলেও কিছুই করার নাই। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল জীবনের শেষ সময়ে ছেলে সন্তান, নাতি-নতনিকে নিয়ে হাসি খুশিতে দিন পার করব। কিন্তু কী করার আছে; আমার কপালে সেই সুখ নাই। আমার ছেলের ইচ্ছা থাকলেও সে তার স্ত্রীর জন্য পারছে না।”

তাকে ছেলে সঙ্গে রাখতে চাইলে তার স্ত্রী লিপি আক্তার ঝগড়া করেন বলে মরিয়ম বেগমের ভাষ্য।

“এখানে আসার আগে চলনা এলাকার গ্রামের বাড়িতে একা একা দিন পার করেছি। তারপর ছেলে বলল আমাকে তার কাছে নিয়ে আসবে। ভাবছিলাম তার বাড়িতে তুলবে। পরে দেখি সে আমাকে এখানে ঘর ভাড়া করে দিয়েছে।”

ছেলে এসে খোঁজ-খবর নিলেও ছেলের বউ কিংবা নাতি-নাতনিরা কেউ আসে না বলে জানান মরিয়ম।

“মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর সেও তেমন কোন খোঁজ-খবর রাখতে পারে না। আমি এখন সন্তানদের বোঝা হয়ে গেছি। মাঝে-মধ্যে অনেক একাকিত্ব লাগলে পাশের ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে সময় পার করি।”

দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন জানিয়ে মরিয়ম বলেন, “চিকিৎসা না করায় প্রায় ১০ বছর আগে বাম পাশের চোখটি নষ্ট হয়ে যায়।  এখন ডান পাশের চোখটিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। হয়ত এটিও নষ্ট হয়ে যাবে।”

দিনা বেগম নামে পাশের এক ভাড়াটিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রমজান মাসে বৃদ্ধা মাকে তার ছেলে এখানে রেখে গেছেন। শোবার জন্য ঘরে ছোট একটি চৌকি দিয়েছিলেন। সেটিও ছাড়পোকায় খাওয়া। তাই এটিও নাই এখন। মরিয়ম বেগম এখন মাটিতে বিছানা করে ঘুমান।

“এমন একজন বৃদ্ধা মাকে এভাবে একা এই অন্ধকার ঘরে রাখা খুবই অমানবিক। শুনেছি ছেলের বউ নাকি তাদের কাছে রাখতে চায় না। বউয়ের কথায় এখানে বৃদ্ধা মাকে ফেলে গেছে। মরিয়ম বেগমের রান্নাবান্না, কাপড়চোপড় ধোয়া এসব আমরাই করে দেই।”

এ ব্যাপারে কিরন শিকদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে বিষয়টি ব্যক্তিগত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখন কিছু বলব না। পরে বলব।”