রংপুরে রথীশ হত্যা: স্ত্রীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

রংপুরে আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশচন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যা মামলায় সাড়ে পাঁচ মাস পর স্ত্রী ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2018, 11:40 AM
Updated : 17 Sept 2018, 11:40 AM

চারদিন আগে (১৩ সেপ্টেম্বর) আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও সোমবার দুপুরে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আল আমীন সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুইজনের বিরুদ্ধে রংপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্থানীয় তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দীপা ভৌমিক এবং তার সহকর্মী একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম। ওই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক।

চলতি বছরের ২৯ মার্চ রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ হন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পাঁচদিন পর (৩ এপ্রিল) রথীশের বাড়ি থেকে কিছু দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে বালুচাপা দওয়া রথীশের লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় আটক তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ ইমলাম ও লিটন মিয়াকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়ে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া এ খুনের ঘটনায় রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী মিলন মোহন্তকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।

অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল আমীন বলেন, রংপুর নগরীর বাবুপাড়ার বাসিন্দা রথীশচন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিক স্থানীয় তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। একই স্কুলের শিক্ষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল দীপার। তারা পরস্পরকে বিয়ে করার জন্য রথীশকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

আদালতে দেওয়া দীপা ও কামরুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এসআই আল আমীন বলেন, গত ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে রথীশ বাসায় ফেরেন। কাপড় পরিবর্তন করে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দীপা ভাতের সঙ্গে ৫টি এবং ডালের সঙ্গে ৫টি চেতনানাশক বড়ি মিশিয়ে রথীশকে খাওয়ান। কামরুল আগে থেকে রথীশের বাড়ির পেছনে আত্মগোপন করে ছিলেন।

“ভাত খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রথীশ অচেতন হয়ে গেলে কামরুল ঘরে ঢোকেন। পরে দীপা ও কামরুল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে রথীশকে হত্যা করেন।”

এরপর লথীশের গায়ে শার্ট, প্যান্ট ও পয়ে জুতা পরানো হয়। ভোরে কামরুল ওই বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সকাল ৯টার দিকে রিকশাভ্যানে করে একটি কাঠের আলমারি আনেন। ওই আলমারিতে রথীশের লাশ ভরে নিয়ে যাওয়া হয় তাজহাটের মোল্লাপাড়ায় কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের নির্মাণাধীন বাড়িতে। সেখানে লাশ পুঁতে ফেলার জন্য আগে থেকেই একটি কক্ষে বালি খুঁড়ে গর্ত করে রাখা হয়েছিল, বলেন আল আমীন।

“পরে আদালতে কামরুল ও দীপার জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল রাতে কামরুলের ভাইয়ের ওই বাড়ি থেকে রথীশের লাশ উদ্ধার করা হয়।” 

রথীশচন্দ্রকে চেতনানাশক খাইয়ে সংজ্ঞাহীন করার পর শ্বাসরোধে হত্যার কথা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে বলা হয়, বলেন আল আমীন।   

রথীশচন্দ্রের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবলের দায়ের করা মামলায় কামরুল, দীপা, তাদের দুই ছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান এবং রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী মিলন মোহন্তকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ১৩ এপ্রিল কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান মিলন মোহন্ত।

এদিকে, মামলার বাদী সুশান্ত ভৌমিক সুবল অভিযোগপত্রে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত বিচার কাজ শুরুর দাবি জানান।

রথীশ চন্দ্র রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুর ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজহারুলের ফাঁসির রায় হওয়ার পর তার আপিল বিচারাধিন রয়েছে। জাপানি নাগরিক  হোশিও কোনি এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় জেএমবির সাত সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেয় রংপুরের বিশেষ জজ আদালত। রথীশ ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ছিলেন।