সাঁতারে রেকর্ড গড়লেন ৬৭ বছরের ক্ষিতিন্দ্র

সাঁতারে নতুন রেকর্ড গড়লেন নেত্রকোণার ৬৭ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

লাভলু পাল চৌধুরী নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2018, 05:34 PM
Updated : 5 Sept 2018, 05:36 PM

এবার তিনি ১৮৫ কিলোমিটার নদীপথ বিরামহীনভাবে সাঁতরে পাড়ি দিয়েছেন, যার জন্য তিনি ৬১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নেন।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটি বিশ্বের এ পর্যন্ত সাঁতারে পাড়ি দেওয়া দীর্ঘতম পথ বলে জানিয়েছেন।

এর আগে গত বছরের ৬ অগাস্ট তিনি ৪৪ ঘণ্টা অবিরাম সাঁতরে ১৪৬ কিলোমিটারের অতিক্রম করেন। এবার নিজের সেই রেকর্ডই ভাঙলেন তিনি।

মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ি পৌরসভা তার দূরপাল্লার এই সাঁতারের আয়োজন করে।

মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন সফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার সকাল ৬টায় শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার ভোগাই নদীর সেতু থেকে সাঁতার শুরু করেন ক্ষিতিন্দ্র।

“বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে তিনি নেত্রকোণার মদন উপজেলা সদরের দেওয়ান বাজারের ঘাটে  মগড়া নদী থেকে উঠে আসেন।

এ সময় নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের লোকজন কৃতি এই সাঁতারুকে দেখার জন্যে ভিড় জামান। উপস্থিত সবাই তাকে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

এ সময় নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আকন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার খান এখলাছ, পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা বিমান বৈশ্য তাকে বরণ করে নেন।

পরে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদের নেতৃত্বে এম্বুলেন্সে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরে তিনি উপজেলা সদরের বৈশ্যপাড়ায় বাড়ি যান।

দীর্ঘ এই সাতারের সময় একজন চিকিৎসক, একটি নৌকায় করে আয়োজকদের লোকজন দিন-রাত তার পিছন পিছন ছিলেন।

সাঁতারের শুরু থেকে ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের সঙ্গে ছিলেন মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আরসুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, টানা এই সাঁতারের সময় নদীর কোথাও পাঁক ছিল, পানি ছিল ঘোলা ও শ্যাওলাযুক্ত। এসব প্রতিকূলতার মধ্যে পাড়ি দিয়েছেন তিনি।

আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য  আব্দুল গণি বলেন, অবিরাম সাঁতারের সময় তিনি তরল খাদ্য গ্রহণ করেছেন সাঁতারের মধ্যেই। অদম্য মনোবলের অধিকারী মুক্তিযোদ্ধা এই সাঁতারু সব বাধা পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।

তার সাঁতারের সময় বাজানো হচ্ছিল আধুনিক বাংলা ও দেশাত্ববোধক গান, যেগুলো তিনি শুনতে ভালোবাসেন।

সাঁতারের পুরো সময় সঙ্গে থাকা চিকিৎসক দেবাশীষ বৈশ্য বলেন, “দীর্ঘ এই সময় পাড়ি দেওয়ার সময় তার শারীরিক কোনো সমস্যা হয়নি।”

আয়োজক কমিটির সদস্য মনোজ কামরুল বলেন, “গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমরা শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার ভোগাই সেতু থেকে মদনের দেওয়ানবাজার ঘাট পর্যন্ত ১৮৫ কিলোমিটার জলপথ নিশ্চিত হয়েছি। সেই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন জেলার কর্মকর্তাদের সাথেও জলপথের দীর্ঘ পরিমাপের বিষয়ে কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও কাজ করেছে জলপথের পরিমাপ নির্ধারণে।”

নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী ১৭৭ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। সেই রেকর্ড তিনি ভাংলেন ১৮৫ কিলোমিটার পধ সাঁতরে পাড়ি দিয়ে। এখন তিনি  দীর্ঘ জলপথ পাড়ি দেওয়ার বিশ্ব রেকর্ডের মালিক।

“গিনেজ বুক অব ওয়ার্লড রেকর্ডসে নাম উঠানোর চেষ্টা আমরা করব। একজন বাঙালি এই রেকর্ডের মালিক হওয়ায় আমি গর্বিত।”

পরিতোষ দাস নেত্রকোণার মদন উপজেলা সদরের বান্দিা। তিনি সাতারের শেষ মুহূর্ত দেখেছেন।

তিনি বলেন, “ইতিহাসের এই রেকর্ডের একজন সাক্ষী হতে পেরে ভালো লাগছে।”

এর আগে ক্ষিতীন্দ্র ১৯৮০ সালে  ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে ভারতের  মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। সাঁতরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে রুপার নৌকা পেয়েছিলেন।এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় সাঁতারে রেকর্ড গড়েছেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য স্বর্ণপদকসহ পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন।

ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের ক্ষিতিশ চন্দ্র বৈশ্যের ছেলে। তিনি বেসরারিক বিমানের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন বলে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য সোমবার সাঁতার শুরুর আগে জানান।

এ সময় তিনি বলেন, “জীবনে অনেক সাঁতার কেটেছি, এটাই হবে হয়ত আমার শেষ সাঁতার। মদন নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা এমন একটি সাঁতারের আয়োজন করার জন্য।”

সাঁতার শেষ করে তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।