দেশি গরু, নীলফামারীর ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি

নীলফামারীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এ বছর ভারতীয় গরু না থাকায় কদর বেড়েছে দেশি গরুর। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে কিনেতে পেরে ক্রেতারা যেমন খুশি, তেমনি আশানুরূপ দাম পেয়ে বিক্রেতারাও খুশি।

বিজয় চক্রবর্তী কাজল নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 09:34 AM
Updated : 16 August 2018, 09:37 AM

জেলা শহর, জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী, মীরগঞ্জ হাটে খোঁজখবর নিতে গেলে ক্রেতা-বিক্রেতারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব তথ্য জানান।

এছাড়া বিজিবি ও সরকারি পশু দপ্তরের কর্মকর্তাও একই তথ্য দিয়েছেন।

জেলা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার হাটে বুধবার গরু কিনতে আসেন সদর উপজেলার বাবুপাড়া গ্রামের খতিবর রহমান (৪৫)।

তিনি বলেন, “৩২ হাজার টাকায় একটি দেশি ষাঁড় কিনেছি। ক্রয়ক্ষতার মধ্যে পছন্দের গরুটা কিনতে পেরেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমার যেটুকু সামর্থ্য ছিল তা দিয়েই খুব সহজে কিনতে পেরেছি।”

এই গরুটির বিক্রেতা জেলা শহরের বড়বাজার এলাকার মিজানুর রহমানও (৪২) আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি হয়েছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “এবার ভারতীয় গরুর তেমন আমদানি না থাকায় আশানুরূপ দাম পেয়েছি। বাজার এমন থাকলে গরু পালনকারীরা হতাশ হবেন না।”

অপরদিকে গরুর দাম সহনীয় পর্যায় রয়েছে বলে মনে করছেন রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী (৫০)।

“স্থানীয় হাট-বাজারে দেশি গরু প্রচুর আমদানি হচ্ছে। ক্রেতারা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে গরু কিনতে পেরে যেমন সন্তুষ্ট, তেমনি বিক্রেতারাও লাভের মুখ দেখছেন বলে জেনেছি।”

একই গ্রামের গরু বিক্রেতা আইয়ুব আলী বলেন, “আমার দুটি পোষা ষাঁড় বিক্রি করতে হাটে এনেছি। প্রতিটি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা দাম বলছেন। অন্যান্যবার লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখব।

“বাজারে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা গরুর আমদানি অনেক। তাতে ক্রেতারা খুশি। এখন কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু ক্রেতারা পছন্দ করছেন না। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারা যে যার সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী গরু কিনছেন।”

ইটাখোলা ইউনিয়নের খামারী মিজানুর রহমান (৩৫) এবার কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজা করেছেন ৪৫টি।

তিনি বলেন, “বাজারে এ পর্যন্ত ভারতীয় গরুর আমদানি ঘটেনি। তাই গরু বিক্রি করে খামারিরা লাভের মুখ দেখছেন। এভাবে চললে আরও অনেকে গরু পালনে আগ্রহী হবেন। তাতে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে।”

টেঙ্গনমারী হাটের ইজারাদার মঞ্জুরুল আলম সিয়াম বলেন, “গত বুধবার তার হাটে আমদানি হয়েছে দুই হাজারের বেশি গরু। সবই দেশি। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি গরু বেচাকেনা হয়েছে। দামে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি।”

ভারতীয় গরুর আমদানি বিষয়ে বিজিবি ৫৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, “গতবারের তুলনায় নগণ্য। নেই বললে চলে। ভারতীয় গরু না আসা সবার জন্যই মঙ্গল। আমরা ঈদ উপলক্ষে সীমান্ত এলাকা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। আশা করি ভারতীয় গরু ছাড়াই দেশি গরু দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন হবে।”

এবার যা মজুদ আছে তাতে সংকটে পড়তে হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোনাক্কা আলী।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে এ জেলায় এ বছর ৬১ হাজারের বেশি গবাদিপশু প্রস্তত হয়েছে। গরু প্রায় ৪৮ হাজার আর ছাগল-ভেড়া ১৩ হাজারের বেশি। গত বছর গরু-ছাগল-ভেড়া মিলে ৬১ হাজারের বেশি পশু কোরবানি হয়।

ছোট-বড় ২৩ হাজারের বেশি খামারে এবং অনেকে বাড়িতে পারিবারিকভাবে এসব পশু পালন করেন বলে তিনি জানান।

প্রতিটি হাটবাজারে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।