জামায়াত ও বিদ্রোহী নিয়ে চ্যালেঞ্জে সিলেটের আরিফুল

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী ও জামায়াত প্রার্থীকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2018, 05:46 PM
Updated : 9 July 2018, 06:02 PM

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সিলেট মহানগর শাখার আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।

সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। এদিন পর্যন্ত সবার চোখ ছিল এ দুই প্রার্থীর দিকে। তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় বিএনপি প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুলকে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।  

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। রাজশাহী ও বরিশালে বিএনপি দল ও জোটের একক প্রার্থী পেয়েছে।

২০১৩ সালের নির্বাচনে জোটের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সিলেটে প্রার্থী দিতে আগ্রহী ছিল জামায়াত। সে লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেন জুবায়ের। পাশাপাশি কুশল-বিনিময় ও গণসেংযোগ চালিয়েছেন।

সিলেটে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থিতা ছেয়েছিল জামায়াত। কিন্তু বিএনপি সেটা মেনে না নেওয়ায় জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এহসানুল মাহবুব জুবায়ের

জুবায়ের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএনপির সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছি। সবকটি সিটিতে জামায়াত বিএনপিকে ছাড় দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা একমাত্র সিলেটকে চেয়েছি। কিন্তু বিএনপি সায় দেয়নি। তাই দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছি।

“আমরা সিলেট সিটি নির্বাচনকে ‘ওপেন’ করে রাখার জন্য জোটের নেতাদের জানিয়েছিলাম; কিন্তু তারা তা করেননি।”

স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় তার প্রার্থিতা জোটের সম্পর্কে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন সিলেট নগর শিবিরের সাবেক এই সভাপতি।

এতদিন সিলেট বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম আরিফকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। আবার জোটের শরিকদল জামায়াতের প্রার্থীও প্রত্যাহার করে নেবেন মনোনয়ন। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দিয়ে দুজনই রয়ে গেছেন ভোটের লড়াইয়ে।

ফলে আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি আরেক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আরিফুলকে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি পরোক্ষভাব লড়বে জামায়াতের সঙ্গেও।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সোমবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জোটের শরীকদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও কেউ প্রার্থী হলে তাদের দল বিষয়টি দেখবে, তবে এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি।

দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে আমির খসরু বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

বদরুজ্জামান সেলিম

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, “দলীয় হাইকমান্ড একটি নির্বাচনী সাক্ষাৎকার পর্বের ব্যবস্থা করেছিল, সেখানে দলীয় ছয় জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জনই আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ার ব্যাপারে জোর দাবি জানান। এই পাঁচ জনই আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও দল আরিফুলকে সমর্থন দেয়।

তৃণমূল বিএনপির কাছে আরিফুলের গ্রহণযোগ্যতা নেই দাবি করে সেলিম বলেন, “দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমেকেই চায়; তাই প্রার্থী হয়েছি।”

দলে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যাওয়া ও জামায়াতের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আরিফুল হকস চৌধুরী বলেন, “জামায়াতকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনেক অনুরোধ করা হয়েছে; কিন্তু তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।

“একটি দলের বিশেষ ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সেলিম। দলের এ ক্রাইসিস মুহূর্তে তার এমন প্রার্থিতাই প্রমাণ করে তিনি কারো সঙ্গে আঁতাত করেছেন। এখন ভোটেই প্রমাণ হবে কার জনপ্রিয়তা কতটুকু।”

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আলী আহমদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটে ২০ দলীয় জোটের সভায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। ওই সভায় জামায়াতের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পরে জামায়াতকে ছাড়াই কমিটি করা হয়।

“আমরা সমাধানের অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু জোটের বৈঠকে জামায়াতের কেউ আসেননি। তবে কেন্দ্রীয় বৈঠকে জামায়াতের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে তিন সিটিতেই বিএনপির মনোনীত প্রার্থীই জোটের প্রার্থী। কিন্তু সিলেট জামায়াত তা না মেনে প্রার্থী দিয়েছে। এ অবস্থায় কী করণীয় তা দলীয় হাই কমান্ড নির্ধারণ করবে।”