বদিকে সৌদি পাঠালেন, মারলেন নিরীহ একরামকে: ফখরুল

টেকনাফের সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সৌদি আরব যাওয়ার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মাদকের ‘বড় কারবারিকে’ বিদেশে পাঠিয়ে ‘রহিম সলিম কলিমকে গুলি করে মারলে’ এই সমস্যার সমাধান হবে না।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2018, 05:01 PM
Updated : 14 June 2018, 05:01 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাব চত্বরে জেলা বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।

মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কী ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছে দেখুন। পাখির মতো গুলি করে মারছে মানুষকে; অপরাধ হচ্ছে মাদকদ্রব্য ব্যবসা করে। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। খুব ভালো কথা, আমরাও চাই বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত করা হোক।

“…কিন্তু এমপি বদিকে বাদ দিয়ে সাধারণ রহিম উদ্দীনকে গুলি করে মারলে তো সে সমস্যার সমাধান হবে না।”

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের এমপি বদি তার নিকটাত্মীয়দের নিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে মাদকপাচারে মদদ দেওয়ার কথা উঠে আসে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গতমাসের মাঝামাঝিতে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এমপি বদি আলোচনায় উঠে আসেন। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী নিহতের মধ্যে ‘সংসদেই মাদক সম্রাট’ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। ফেইসবুকেও বদিকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।   

এর মধ্যে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বদির এক বেয়াই নিহত হয়েছেন। তারপরে র‌্যাবের অভিযানে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হন, যিনি নির্দোষ ছিলেন বলে দাবি পরিবারের।

একরামের মৃত্যু নিয়ে যখন ব্যাপক আলোচনা চলছিল, সেই সময় এ মাসের শুরুর দিকে ‘ওমরা পালনের জন্য’ আব্দুর রহমান বদির সৌদি আরব যাওয়ার খবর আসে।  

এই প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “মাদক ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা করেছেন আপনাদের সংসদ সদস্য (বদি)। তাকে নিরাপদে আপনারা সৌদি আরবে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখানে রহিম উদ্দীন, সলিম উদ্দীন, কলিম উদ্দীনকে আর নিরীহ কমিশনার একরামকে তার বাচ্চার সামনে গুলি করে মেরেছেন।”

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে এখন যারা রাজনীতি করছে ‘শুধু তারাই বিপদে পড়ছে না’।

“সাধারণ মানুষ এখন চরম বিপদে পড়েছে। আর তাদের (আওয়ামী লীগ) নেতা-মন্ত্রীরা বড় বড় কথা বলছেন সব সময়।”

মামলা দিয়ে তাদের অনেক জাতীয় নেতাকেও হয়রানির অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিরোধী দলকে দমন করে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ মামলাকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে ।

“একটা রাজনৈতিক দল যখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, যখন তাদের জনগণকে কিছু দেওয়ার থাকে না, তখন তারা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করে ঘায়েল করতে চায়।”

পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস আছে উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “তারা আজকে মামলার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের রাজনীতি-ভালোবাসা দিয়ে জনগণকে আকর্ষণ করতে পারছে না। জনগণ তাদের দেখলে পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়।

“আওয়ামী লীগকে দেখলে জনগণ ভয় পায়। আওয়ামী লীগকে দেখলে জনগণ মনে করে, একটা দানব এসেছে।”

নিজের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হন। এই ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে আগামীতে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে।”

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস প্রমুখ।