বন্যায় জামালপুরের রাস্তা-ঘাট লণ্ডভণ্ড

টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে জামালপুরে দুই সপ্তাহের বন্যায় রাস্তাঘাট লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

লুৎফর রহমান জামালপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2017, 05:55 PM
Updated : 24 August 2017, 05:56 PM

পানি নেমে গেলেও রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। 

জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় জামালপুরের সাতটি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন ও আটটি পৌর এলাকা প্লাবিত হয়। পানির প্রবল স্রোতে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি, বকশিগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার বাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

“বন্যায় এ জেলার দুই হাজার ১৫৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ৫৯৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ২৫টি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে এবং ৬৯টি হাট-বাজারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”

পানির প্রবল স্রোতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে এবং বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয় বলেও তিনি জানান।

প্রকৌশলী নজরুল বলেন, এখনও অনেক স্থানে রাস্তার উপর থেকে বন্যার পানি নেমে যায়নি, যার কারণে পুরোদমে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যেসব জায়গায় পানি সরে গেছে সেসব জায়গায় মোবাইল মেইনটেন্যান্সের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে।

“বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পরিমাপ করা হচ্ছে। পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে রাস্তা সংস্কারে দরপত্র আহবান করা হবে।”

তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট মেরামতের জন্য এখনও কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে পানি থেকে জেগে ওঠা রাস্তাগুলো ঈদের আগেই মানুষের চলাচলের উপযোগী করা হবে।

জামালপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সড়ক ও জনপথের ৮০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও জনপথের যেসব রাস্তা ক্ষতি হয়েছে তার বেশিরভাগ বন্যার সময়ই মেরামত করা হয়েছে।

“যেসব রাস্তা মেরামতের অপেক্ষায় আছে সেসব রাস্তার কারনে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের যাতায়াতে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুত উন্নয়ন করা হবে বলে তিনি জানান।

ইসলামপুরের মোজা আটা গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, বন্যার কারণে সড়কগুলো ভেঙ্গে গেছে। ফলে যাতায়াত করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। বন্যার আগে মোটর সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইকে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারলেও এখন চলার সুযোগ নেই।

একই এলাকার রিকশা চালক মনজু মিয়া বলেন, এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, পিকআপ, ভটভটি ও নছিমন চালাতে না পেরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, বন্যায় তার ইউনিয়ন  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তার ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো সড়ক দুদফা বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় ২০ থেকে ২৫  হাজার মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারছে না। আর বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ছোট ছোট যানবাহনের শ্রমিকরা।  

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি এলাকার স্কুল শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, চলতি বন্যায় সানন্দবাড়ি-মৌলভীবাজার রাস্তাটি বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় এই এলাকার ছাত্র শিক্ষকসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা না হলে ঈদে মানুষের বাড়িতে আসা কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান বলেন, তার ইউনিয়নের ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার মধ্যে চার কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ৬ কিলোমিটার আংশিক এবং ৩৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার ১১ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও বাকি রাস্তার আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

এখনও সরকারের কোনো দপ্তর সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি বলে তিনি জানান।

বকশিগঞ্জ উপজেলার আলিরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজী শহিদুর রহমান জানান, বকশিগঞ্জ আলিরপাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গাজী আহাদুজ্জামান সড়কের চার কিলোমিটার সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। ওই সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।