ঝালকাঠির মন্দিরে হামলার পেছনে ‘জমির বিরোধ’

ঝালকাঠি শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে হামলার নেপথ‌্যে পাশের ‘বারোচালা বাজারের’ জমি নিয়ে চাল বিক্রেতাদের একটি দল ও মন্দির কমিটির বিরোধ কাজ করেছে বলে উঠে এসেছে দুই পক্ষের কথায়।

পলাশ রায় ঝালকাঠি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2016, 10:40 AM
Updated : 17 Nov 2016, 12:43 PM

দুই পক্ষই বুধবার রাতের ওই হামলার ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

এদিকে ঘটনা তদন্তে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মকবুল হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বুধবার রাত ১১টার দিকে শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে ওই হামলায় চার পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। হামলাকারীরা কার্তিক প্রতিমার মাথাসহ বেশকিছু অংশ ভেঙে ফেলে।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার নাথ ভানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার রাতে পূজার শেষ পর্যায়ে চালের দোকানি গোপাল দেবনাথ, হাকিম হাওলাদার, সমীর দেবনাথ, দুলাল দেবনাথসহ একদল লোক মন্দিরে ঢুকে হামলা চালায়।

“এটা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। মন্দিরের জমিতে মন্দির সংলগ্ন বারোচালা বাজারের চালের দোকানিরা জমি দখলে রাখার জন্য পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।”

তবে চাল বিক্রেতা গোপাল দেবনাথ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “মন্দির কমিটির সদস্যরাই রাতে আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের গুরুতর আহত করে। তারা চালের দোকানপাট ভাংচুর করে। মন্দির কমিটির লোকজনই প্রতিমা ভাংচুর করে উল্টো আমাদের ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

মন্দির কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক উদয় শংকর জানান, ২৩৭ বছর ধরে এই মন্দির প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। আশির দশকে ঝালকাঠি পৌর কর্তৃপক্ষ প্রাঙ্গণের পাশে একটি অংশে চালের দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করতে থাকে। মন্দির কর্তৃপক্ষ পরে মামলা করে।

“সম্প্রতি পূজার জন্য মন্দির চত্বর সম্প্রসারণ করে বারোচালার দুই পাশে বেড়া দেওয়া হয়। বুধবার রাতে চাল বিক্রেতারা একটি বেড়া ভেঙে হামলা শুরু করে।”

অন‌্যদিকে ঝালকাঠি পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, “১৯৯৮ সালে আদালতের মাধ্যমে সমঝোতা হয় যে, যতদিন চাল বিক্রির জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ একটি সুবিধাজনক জায়গা খুঁজে না পাবে, ততদিন বারোচালায় চাল বিক্রি চলবে।”

তিনি বলেন, হিন্দু নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সুবিধাজনক একটি জমি খুঁজছিলেন তারা। কিন্তু এর মধ‌্যেই হামলার ঘটনা ঘটল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেনি।”

তিনি জানান, মন্দির ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হামলার ঘটনার পর বরিশাল থেকে র‌্যাব সদস্যরা এসে মন্দির এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।

ঝালকাঠির পুলিশ সুপার যোবায়েদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দর রকিব, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এমএম মাহমুদ হাসান, সদর থানার ওসি মাহে আলমসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।