নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান রোববার সকালে এ মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসবি) ফারুক হোসেন জানান, সন্ত্র্রাস দমন আইনের এ মামলায় ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষনেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ নিহত তিনজনের কথা রাখা হয়েছে আসামির তালিকায়। তবে বাকি দুজনের নাম সেখানে লেখা হয়নি। অজ্ঞাতপরিচয় ‘আরও অনেককে’ এজাহারে আসামি করা হয়েছে।
জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে শনিবার সকালে পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার নরুউদ্দিন দেওয়ানের তিনতলা বাড়ি ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পরে র্যাবসহ অন্য বাহিনীগুলোও অভিযানে যোগ দেয়।
‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’ নামে এক ঘণ্টার ওই অভিযানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক জঙ্গিনেতা তামিমসহ তিনজন নিহতের খবর নিশ্চিত করেন।
অভিযান শুরুর আগে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল জানিয়ে তারা বলেন, তাতে সাড়া না দিয়ে উল্টো জঙ্গিরা গুলি ও গ্রেনেড ছুড়েছিল পুলিশকে লক্ষ্য করে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে।”
অভিযানের পর ওই আস্তানা থেকে একে-২২ রাইফেল, পিস্তল, গুলি, চাপাতি ও ছোরাসহ কয়েকটি হাতুড়ি উদ্ধার করা হয় বলে সদর মডেল থানা পুলিশ জানায়।
২০১৩ সালে কানাডা থেকে আসার পর থেকে নিখোঁজ তামিম বাংলাদেশেই ছিলেন বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছিলেন। তার নির্দেশনায়ই গত ১ জুলাই জঙ্গিরা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা কেরা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিমের নাম এসেছিল। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনার উপর ভিত্তি করে তাকে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে।
নিহত বাকি দুজনের নাম মামলার এজাহারে লেখা না হলেও তাদের একজন যশোরের এমএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফজলে রাব্বি বলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শনিবারই নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে রাব্বির পরিচয় জানতে পেরেছেন তারা। গুলশান হামলার পর যশোর পুলিশ নিখোঁজ যে পাঁচজনের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছিল, সেখানে ২ নম্বরে রাব্বির ছবি ছিল।
রাব্বি গত ৫ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ বলে তার পরিবারের ভাষ্য। তার বাবা হাবিবুল্লাহ ৭ এপ্রিল ছেলের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে স্থানীয় থানায় একটি জিডিও করেছিলেন।
ওই অভিযানে নিহত অন্যজন ঢাকার ধানমণ্ডির তাওসীফ হোসেন বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি তারা।
ধানমণ্ডির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ডা. মো. আজমলের ছেলে তাওসীফ গত মার্চে ঘর ছাড়েন। গুলশানের ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে নিহত নিবরাজ ইসলাম, শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আবীর রহমান এবং কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত শেহজাদ রউফ অর্কও একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য।
গত ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে হামলার আগে ঢাকার এই চার তরুণই ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন বলে জুলাইয়ের শেষদিকে জানিয়েছিলেন জঙ্গি-তদন্তে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তাওসীফের ফুপাত ভাই আহমেদ শাম্মুর রাইয়ান একবার আইএসে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র শাম্মুর মালয়েশিয়ায় পড়তেন, যে দেশটিতে নিবরাজও পড়তেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক রোববার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, তামিমরা গত ২ জুলাই ওই বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন বলে ভবন মালিক নুরুউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন। তথ্য গোপনের অভিযোগে নুরুউদ্দিনকে তারা গ্রেপ্তারও করেছেন।
“বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তারা বলেছিল, তারা আগে একমি ল্যাবরেটরিজে কাজ করত। এখন ওষুধের ব্যবসা করছে- এই পরিচয় দিয়ে তারা দুজন বাড়ি ভাড়া নেয়। তবে সেখানে যে তিনজন থাকত, তা বাড়ির মালিক জানতেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ‘নিরাপদ মনে করে’ ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলেন জঙ্গি নেতা তামিম। বিদেশিদের ওপর হামলার ‘পরিকল্পনা ছিল’ তাদের।
পুলিশ ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ‘ব্লক রেইড’ চালাচ্ছে এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে মঈনুল হক জানান।