ফেনীতে ১০ বছর আগে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যায় একজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. ওসমান হায়দার আসামির অনুপস্থিতিতে এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) হাফেজ আহম্মদ।
বিবি খাদিজা আক্তার রুবিকে (২৭) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে মো. সেলিম ওরফে মো. সালাহ উদ্দিন সেলিমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের এই আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
মামলার নথির বরাত দিয়ে পিপি হাফেজ আহম্মদ জানান, ২০০৪ সালে সোনাগাজী উপজেলার চর সোনাপুর গ্রামের মো. শহীদ উল্যাহর মেয়ে বিবি খাদিজা আক্তার রুবির সঙ্গে একই উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামের মো. সোলেমানের ছেলে মো. সালাহ উদ্দিন সেলিমের বিয়ে হয়। কয়েক বছর পর তাদের সংসারে ছেলে রিফাত হোসেন হৃদয়ের জন্ম হয়।
২০১২ সালে সেলিম বিদেশ যাওয়ার জন্য রুবির বাবার কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদ নিয়মিত রুবিকে শারীরিক নির্যাতন করতো। কিন্তু ছেলে হৃদয়ের কথা চিন্তা করে রুবি শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করছিলেন।
এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে রুবিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ওইদিন রাতে রুবির বাবার বাড়িতে তার মৃত্যুর তথ্য জানিয়ে পালিয়ে যান সেলিম। হত্যার সময় রুবি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
পরে খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ ওই রাতে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
পিপি হাফেজ আহম্মদ আরও জানান, ওই ঘটনায় পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর নিহত রুবির বড় ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় রুবির স্বামী মো. সালাহ উদ্দিন সেলিম (৩০), শ্বশুর মো. সোলেমান (৫৫), শাশুড়ি হাজেরা খাতুন (৫৫), দেবর সেন্টু (২৫) ও জিয়া (২৩) এবং ননদ পলি আক্তারকে (২০) আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন এসআই শ্রীবাস চন্দ্র দাস ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিহতের স্বামী, শ্বশুর ও ননদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার দীর্ঘ বিচারকালে ২২ জন স্বাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন বিচারক।
পিপি আরও জানান, রায়ে আদালত অপর দুই আসামিকে বেকুসুর খালাস প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন কামরুল হাসান ও সামছুদ্দিন।