“যারা তুলে এনেছে তারা বলছে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে।”
Published : 17 Jan 2025, 03:50 PM
রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিত্যক্ত বাড়িতে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরের উপশহরের এই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে কলেজছাত্রকে উদ্ধারের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়। গ্রেপ্তাররা তিনজনই ছাত্র। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মেহেদী মাসুদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় রাতেই বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মেহেদী মাসুদ।
গ্রেপ্তাররা হলেন-রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদত হোসেন (২৫), বাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২২) ও শহীদ বুদ্ধিজীবী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাহাসান হোসেন আকাশ (২১)।
তাদের মধ্যে শাহাদতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। বাকিদের বাড়ি নাটোর সদরে।
আর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ফাহিম হোসেন জীম (১৭)। তিনি রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
জীম বলেন, “আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আমি আন্দোলনে ছিলাম। কিছুদিন ধরে আমাকে বার বার কল করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, আমি নাকি ছাত্রলীগ করি। আমি নগর ভবনের সামনে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে। আনার পরে মারধর করে।
“যারা তুলে এনেছে তারা বলছে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে। তারা আমার কাছে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে আমি আমার দুজন বন্ধুকে ডাকলাম। আমার বন্ধুরা এসে লোকজন ডেকে আমাকে উদ্ধার করে।”
জীমকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন নগরীর উপশহর এলাকায় কলেজছাত্র আজিজুর রহমান কাফি। তিনি বলছেন, “আমরা গিয়ে দেখি, ছেলেটিকে গ্যারেজে অন্ধকারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। আমি ওই তিনজনের পরিচয় জানতে চাই। তখন তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়। বলে, ওপরের নির্দেশ আছে এই ছেলেকে ধরার জন্য। তার বন্ধু ছাত্রলীগ করে।
“একে ধরলে তার বন্ধুকে পাওয়া যাবে। আমি তাদের কাছে ওপরের নির্দেশটিই দেখতে চাই। কিন্তু তারা কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেনি। এরই মধ্যে পুলিশ চলে আসে। পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।”
কাফি আরও বলেন, “এরা যে ছেলেটিকে ধরে আনে সে ছাত্রলীগের কেউ না। মোবাইলে ছবি দেখলাম, সে নিজেই আন্দোলনে ছিল। ছেলেটির কাছে প্রথমে দেড় লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওই তিনজন নিজেদের তাহাস নূর নামে একজনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাহাস ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।”
তাহাস নূর রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি। ওই তিনজন আন্দোলনের সময় আমার সঙ্গে ছিল। আমরা একসঙ্গে নগর ভবন পাহারা দিয়েছি।
“তারা আমাকে জানায় যে, তারা একজন ছাত্রলীগকে ধরেছে। আমি তাকে পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।”
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “সমন্বয়ক পরিচয়ে এক কলেজছাত্রকে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাসায় আটকে রাখার খবর পেয়ে সেখানে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করে এবং তিনজনকে থানায় নিয়ে আসে।
“থানায় জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ফাহিম হোসেন জীম থানায় মামলা করেছে। সে মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”