যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় কভার্ডভ্যান চাপায় পাঁচ মৃত্যুর পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে টুনিয়াঘরা গ্রাম।
শুক্রবার সকালে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেগারীতলা বাজারে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় মনিরামপুরের টুনিয়াঘরা গ্রামের চারজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন পিতা-পুত্র ও অপর দুই জন দাদা-নাতি। নিহত আরেকজন পাশের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা।
দুপুরে নিহতদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে টুনিয়াঘরা গ্রামের পরিবেশ।
নিহত হয়েছেন টুনিয়াঘরা গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪০), তার ছেলে তাওশিকুর রহমান (৭), একই গ্রামের শামসুর রহমান (৫৫), তার নাতি (ভাইপোর ছেলে) তৌহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং পাশের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান (৩৫)।
প্রতিবেশী ও স্বজনরা সেই দুর্ঘটনা ও প্রিয়জনদের প্রাণ হারানোর বর্ণনা দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে।
শিশু তাওশিকুর রহমান বাবার হাবিবুর রহমানের কাছে সকালে বায়না করে হোটেলে নাস্তা করতে নিয়ে যেতে হবে। বাড়ির কাছের হোটেলে যাওয়ার জন্য পিতা-পুত্র যখন রাস্তায় উঠেছেন তখনই কভার্ডভ্যানটি তাদের পিষে দিয়ে ঢুকে পড়ে হোটেলে।
হোটেল থেকে নাস্তা করে পাশে একটি বন্ধ চায়ের দোকানের চৌকির ওপর বসেছিলেন শামসুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম।
তাদেরকেও পিষ্ট করে হোটেলের টাকা পরিশোধের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো জয়পুর গ্রামের জিয়াউর রহমানকেও চাপা দেয়।
দুর্ঘটনায় এই এলাকার নজরুল ইসলাম, আবু তালেব, মনির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র তাজিম হাসান ও হাবিবুরের ছোটভাই ইব্রাহিম খলিল ঝন্টু বলেন, শুক্রবার সকালে তাওশিকুর রহমান বাবার কাছে আবদার করেছিল তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে হোটেলে নাস্তা খাওয়াতে হবে। আবদার মেটাতে তাওশিকুরকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির সামনে বেগারীতলা বাজারে হোটেলের উদ্দেশে রওনা হয়ে আপন ভাই বজলুর রহমানের মুদি দোকানের সামনে পৌঁছান।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, দোকানের সামনে পৌঁছানো মাত্রই উত্তর দিক থেকে দ্রুতগামী একটি কভার্ডভ্যান তাদের (পিতা-পুত্র) ধাক্কা দিয়ে দোকানের একাংশ ভেঙে সামনের দিকে সারিবদ্ধ অন্য ১০ দোকানেও আঘাত করে। কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় রক্তাক্ত হয়ে ছটফট করতে করতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবা ও ছেলে।
নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বামী ও ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী তৌহিদা বেগম। একই অবস্থা শামছুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে।
দুই বাড়ির স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে টুনিয়াঘরার পরিবেশ। বাড়িগুলোতে যারাই গেছেন ফিরতে হয়েছে ভেজা চোখ নিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী আমেনা বেগম, শাহাজান আলী, হোটেল ব্যবসায়ী আবুতালেবসহ স্থানীয়রা জানান, নিয়ন্ত্রণহারা কভার্ডভ্যানটি একে একে মতিয়ার রহমানের পানের দোকান, বাবুর ভাজার দোকান, আতিয়ারের মিষ্টির দোকান, শাহাজানের পানের দোকান, রুহুল আমিনের চায়ের দোকান, আবু তালেবের হোটেলসহ ১০টি দোকানে আঘাত করে। দোকানগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
চা দোকানি রুহুল আমিন বলেন, টুনিয়াঘরা গ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক শামছুর রহমান ও তার নাতি তৌহিদুল ইসলাম দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে চা পান করছিলেন। কাভার্ডভ্যান চাপায় ঘনাস্থলেই দাদা-নাতির মৃত্যু হয়।
বিসমিল্লাহ হোটেলের মালিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলেন।
তিনি বলেন, কোনো কিছু বোঝার আগেই ঝড়ের গতিতে কভার্ডভ্যানটি তার হোটেলের ভেতর ঢুকে পড়ে। হোটেলটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
তার ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মনিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, শিশু তাওশিকুর রহমান ছাড়া বাকি চার জনের ময়নাতদন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। বিকালে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: