বুধবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া ও বড়মাধাইমুড়ি গ্রামে চারজনের ও নাটোরের নলডাঙ্গার চানপুর গ্রামে পৌঁছে লাশবাহী কফিনগুলো।
Published : 09 Aug 2023, 09:11 PM
সৌদি আরবের হাম্মাম শহরের আসবাবের দোকানে আগুনে পুড়ে নিহত সাত বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনের লাশ রাজশাহী ও নাটোরে পৌঁছেছে।
বুধবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া ও বড়মাধাইমুড়ি গ্রামে চারজনের ও নাটোরের নলডাঙ্গার চানপুর গ্রামে আসে লাশবাহী কফিনগুলো।
দুপুরে বাগমারা উপজেলার প্রবাসী গ্রাম নামে পরিচিত বারইপাড়া গ্রামের রুবেল হোসাইন, মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, মো. আরিফ হোসেন রুবেল, বড়মাধাইমুরি গ্রামের ফিরুজ আলী সরদার এবং নলডাঙ্গার চাঁদপুরের ওবায়দুল ইসলামের লাশ নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে।
লাশবাহী কফিনগুলো পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা, পুরো গ্রাম জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রবাসীদের শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ।
একে একে সবার জানাজা শেষে লাশগুলো দাফন করা হয়।
গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার দিকে দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি সোফা কারখানায় আগুন লাগে। এতে নয়জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সাতজনই বাংলাদেশি।
পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে ছয় মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমানো রুবেল হোসাইন ভিডিও কলে বিয়ে করেছিলেন ১০ মাস আগে। কথা ছিল দেশে ফিরে সংসার হবে তার, দেখা হবে নববধূর সঙ্গে। কিন্তু ফার্নিচার কারখানার আগুন কেড়ে নিয়েছে রুবেল আর মরিয়মের স্বপ্ন।
আগুনে যারা পুড়েছেন, তাদের সবার সঙ্গেই পুড়েছে গোটা পরিবারের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো।
অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন চাচা সাজেদুল ইসলাম ও ভাতিজা আরিফের লাশ বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে, তখন আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে গোটা এলাকার বাতাস। এই চাচার হাত ধরেই সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন আরিফ, ফিরলেনও তার সঙ্গে। তবে এই ফেরা আনন্দের নয়; এটাই পার্থক্য।
নিহত আরেক বাংলাদেশি ফিরোজ আলী সরদার সাড়ে তিন বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী। দেশে ফিরলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, “মঙ্গলবারে দিবাগত রাতে চারজনের মরদেহ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।”
সরকারি উদ্যোগেই এসব লাশ দেশে আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
লাশ আসবে খবর পেয়ে আগে থেকেই নাটোরের নলডাঙ্গার চানপুরের ওবায়দুল ইসলামের জন্য কবর প্রস্তুত করে রেখেছিলেন স্বজনরা। দুপুরে স্থানীয় বাজারে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
২০১৯ সালে জীবিকার তাগিদে, সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ওবায়দুল। এবার ছুটিতে এলে বিয়ে করবেন বলে জানিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের।
ফিরেছেন তিনি ঠিকই, তবে চিরদিনের মতো।
আরও পড়ুন:
সৌদিতে আগুন: ভিডিও কলে বিয়ে, সংসার শুরুর আগেই বিধবা