“সব জিনিসের দাম বাড়েচ্ছে, এর মইধ্যে সোয়াপিন ত্যালের দাম আবারও বাড়ল। এ্যাখোন হামরা গরিব মানুষ ক্যং করি বাচুম?”
Published : 07 Dec 2024, 06:22 PM
গাইবান্ধার হাট-বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দুএকটি দোকানে মিললেও সে জন্য ক্রেতাকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।
এ ছাড়া খোলা সয়াবিন ও পাম তেলও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত তেল বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলে এমন সংকট। আর ডিলারদের দাবি, কোম্পানি থেকে তেল না পাওয়ার কারণে সরবরাহ বন্ধ হয়েছে।
শনিবার জেলা শহরের পুরাতন বাজার, হকার্স মার্কেট, নতুন বাজার ও ডিবি রোডের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল পাইকারি পর্যায়ে প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, পাম তেল পাইকারিতে ১৫৫-১৫৮ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগেও লিটারে অন্তত ১৫-২০ টাকা কম ছিল।
এ ছাড়া ৭-৮ দোকান ঘুরে একটিতে পাওয়া গেলেও বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের জন্য ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২০০ টাকা।
কথা হয় জেলা সদরের খোলাহাটি গ্রাম থেকে গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী বাহারাম খানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “কোথাও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়েও খোলা তেল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। শুনছি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় বোতলজাত সয়াবিন কেটে খোলা দরে বিক্রি করছে।”
তিনি বলেন “ঠিকমত বাজার মনিটরিং করলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না।”
সাদুল্লাপুর উপজেলার হবিবুল্যাপুর গ্রাম থেকে সাদুল্লাপুর বাজারে আসেন কৃষক আব্দুল জোব্বার আকন্দ। সবজি-মাছসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর এক দোকান থেকে অন্য দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল খুঁজছিলেন তিনি।
তিনি বলেন “কোনখানেও বোতলের সোয়াপিন ত্যাল পাতেছি না। কয়েকটা দোকানোত দ্যাখনু দুই-একট্যা করি আছে। কিন্তু বেশি দাম চাতেচে (চাচ্ছে)।”
তিনি আরও বলেন, “সব জিনিসের দাম বাড়েচ্ছে (বাড়ছে), এর মইধ্যে সোয়াপিন ত্যালের (তেল) দাম আবারও বাড়ল। এ্যাখোন হামরা গরিব মানুষ ক্যং করি (কেমন করি) বাচমু (বাঁচব)?”
সাদুল্লাপুর বাজারের মেসার্স শাপলা স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবু নাছের মজনু মিয়া বলেন, গত এক মাস ধরে ডিলারদের কাছ থেকে নিয়মিত সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে কয়েকদিন থেকে সরবরাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা শহরের বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সবুর অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সবুর সরকার বলেন, গত এক মাস ধরে কোম্পানি থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না তারা। সবশেষ গত সপ্তাহে পেয়েছেন। বাজারে চাহিদা থাকায় তা শেষ হয়ে গেছে। তাই এমন সংকট।
জেলার বিশেষ টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জহির ইমাম বলেন, “হাট-বাজারগুলোতে আমাদের নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রয়েছে। কী কারণে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বোতল কেটে সয়াবিন তেল খোলা দরে বিক্রির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে আমরাও পেয়েছি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কিংবা এর সত্যতা আমরা পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”