প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
Published : 13 Nov 2023, 05:59 PM
নতুন করে গড়ে তোলা শেখ রাসেল নগর পার্ক আর দৃষ্টিনন্দন বাবুরাইল ও সিদ্ধিরগঞ্জ খাল এখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে; এগুলোসহ চালুর অপেক্ষায় থাকা ১০টি প্রকল্প শোভা পাল্টেছে নারায়ণগঞ্জ নগরীর।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ১০ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এগুলো উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য এগুলো সম্পূর্ণরূপে খুলে দেওয়া হবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এসব প্রকল্পের কয়েকটি ইতোমধ্যে নগরবাসীর জন্য সীমিত আকারে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নেওয়া এসব প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন স্থান বাহারি রঙের পতাকা ও ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে। প্রকল্প এলাকাগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জার আয়োজন।
এ উপলক্ষে সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের মিলনায়তনে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ।
মেয়র বলেন, “প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথ সহজ ছিল না। অবৈধ দখলদার ও প্রভাবশালীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে নগরবাসীর সহযোগিতায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হই।”
প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্প দশটি হল- ১০তলা নগর ভবন, শেখ রাসেল নগর পার্ক, ঐতিহাসিক পাইকপাড়া মিউচুয়েল ক্লাব, দৃষ্টিনন্দন বাবুরাইল খাল, সিদ্ধিরগঞ্জ খাল, পাক পাঞ্জাতন সিটি জামে মসজিদ, আলী আহাম্মদ চুনকা সিটি পাঠাগার ও মিলনায়তন, কলরব কিন্ডার গার্টেন স্কুল, সিটি ওয়েলফেয়ার মাঠ ও শিশু পার্ক, সোনাকান্দা খেলার মাঠ।
নগর ভবন: ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০তলা নগর ভবন। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
শেখ রাসেল নগর পার্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নামে নগরীর দেওভোগ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এ পার্ক। এক সময়ের মাদক ও সন্ত্রাসের এলাকা হিসেবে পরিচিত ‘জিমখানা বস্তি’ এখন নগরীর ফুসফুস হিসেবে পরিচিত। ১৮ একর জায়গায় ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ পার্ক নগরবাসীর বিনোদন ও স্বস্তির জায়গায় পরিণত হয়েছে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বারংবার বাধা পেয়েছে সিটি করপোরেশন। যদিও নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করবে মেয়র আইভী এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সহযোগিতার কথাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বীকার করেছেন তিনি।
পাইকপাড়া মিউচুয়েল ক্লাব: নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সংস্কার ও সংরক্ষণের লক্ষে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত পাইকপাড়া মিউচুয়েল ক্লাব। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, এ ক্লাবেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠনের ব্যাপারে বৈঠক করেন। এ কমিটিই পরে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ঘোষণা করা হয়। তিন তলা ভবনের এ ক্লাব নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
বাবুরাইল খাল: ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মৃতপ্রায় বাবুরাইল খালকে খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। দুই দশমিক আট কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল শীতলক্ষ্যা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর শাখা খালকে সংযুক্ত করে। এ প্রকল্প ইতোমধ্যে দু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ খাল: ২০১৮ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আদমজী ইপিজেড থেকে ডেমরা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সিদ্ধিরগঞ্জ খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে নির্মিত এ প্রকল্পে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য এম্পিথিয়েটার, ভাসমান মঞ্চ, নৌকা চালনার ঘাট, ছয়টি ব্রিজ রাখা হয়েছে। পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক।
পাক পাঞ্জাতন সিটি জামে মসজিদ: নগরীর কদমরসুল অঞ্চলে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে পাক পাঞ্জাতন সিটি জামে মসজিদ। ২৪ শতাংশ জায়গায় ৮ কোটি ৬৯ লাখ ব্যয়ে নির্মিত এই মসজিদে একসাথে দুই হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা রয়েছে।
মসজিদের একটি অংশে (৫ তলা) পুরুষদের জন্য, পৃথক অংশে নারীদের জন্য (৩ তলা) নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আলী আহাম্মদ চুনকা সিটি পাঠাগার ও মিলনায়তন: বিগত কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রয়াত চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার নামে ‘আলী আহাম্মদ চুনকা সিটি পাঠাগার ও মিলনায়তন’ নগরীর শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশে ভূমিকা রাখছে। ২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই পাঠাগারটি পুর্ণনির্মাণ করে বর্ধিত করা হয়েছে। এ পাঠাগারে রয়েছে মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, উন্মুক্ত আর্ট গ্যালারি, স্টুডিও থিয়েটার, পাবলিক লাইব্রেরি ও মিনিপ্লেক্স ‘সিনেস্কোপ’।
কলরব কিন্ডার গার্টেন স্কুল: মানসম্মত শিশু শিক্ষার বিকাশে আধুনিক সুযোগসুবিধা সমৃদ্ধ কলরব কিন্ডার গার্টেন স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মিত ৫ তলা ভবনের এ স্কুল ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত।
সিটি ওয়েলফেয়ার মাঠ ও শিশু পার্ক: শিশু কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৭ একর জায়গায় সিটি ওয়েলফেয়ার মাঠ ও শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ মাঠ ও পার্ক।
সোনাকান্দা খেলার মাঠ: নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ একর জায়গায় সোনাকান্দা খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়।