রাজশাহী সিটি কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
Published : 14 Aug 2024, 10:06 PM
বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদীনকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠেছে।
পদত্যাগ করার পরও থেমে নেই হুমকি। একাধিকবার অপরিচিত নম্বর থেকে মোবাইলে কল করে হুমকি দেওয়া হয়। ফলে আতঙ্কে থাকার অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষের পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার পর বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান অধ্যক্ষ আমেনা আবেদিনের ছেলে সামিউল অর্ক। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সামিউল অর্ক বলেন, “মঙ্গলবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন আমার মা। এর পর দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গিয়ে দুই ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আমার মাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে পরিণতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দেয়।
“এরপর খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। তাদের আচরণের প্রতিবাদ করলে তারা আমার গায়ে হাত তুলে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আমার মা এগিয়ে এলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। এক পর্যায়ে তারা একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে নিয়ে এসে তাতে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে।”
সামিউল অর্ক বলেন, “আমার মা পদত্যাগ করার পরও থেমে নেই তাদের হুমকি-ধামকি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি ও আমার পরিবার এখন প্রাণ সংশয়ে ভুগছি।
তিনি বলেন, “আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য। আমি অন্যদের সঙ্গে আটকও হয়েছিলাম মতিহার থানায়। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জানানো হয়েছে। তবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তারা কিছু বলেননি। এ ছাড়া বিষয়টি সেনাবাহিনীর বোয়ালিয়া থানা ক্যাম্পের কমান্ডারকে জানানো হয়েছে।”
ঘটনাটি নিয়ে অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীন নিজের ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন।
যদিও ছাত্রদল নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরে একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে আনা হলে অধ্যক্ষ তাতে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমিনা অবেদীনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
ঘটনাটি নিয়ে আমিনা আবেদীন মঙ্গলবার ফেইসবুকে তিনটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটিতে তিনি লেখেন, “আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে।”
আরেকটিতে লেখা হয়, “আমাকে ও আমার ছেলেকে শারীরিকভাবে হামলা করেছে ছাত্রদল।”
অন্য স্ট্যাটাসে অধ্যক্ষ লেখেন, “ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাতে আমার জীবন হুমকির মুখে।”
এদিকে, আমিনা আবেদীনের ছেলে সামিউল অর্ক নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সমালোচনা করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন।
তিনি লিখেছেন, “আজকে রাজশাহীর প্রধান একটা কলেজের অধ্যক্ষের গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। জোর করে তাকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদীন এবং তার সন্তান অর্কর গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদল। এই অর্ককে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতেই আমরা মতিহার থানায় ১০ ঘণ্টা বসেছিলাম (আন্দোলনের সময় আটক হন)।”
তিনি লেখেন, “ছাত্রদল কি পুরোনো জামানার খাসলত থেকে বের হবে না? ছাত্রলীগের জুলুমের পথেই চলবে তারা? আর বাংলাদেশ তা মেনে নেবে? আশা করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা বিএনপি নেতাদের একটা বিহিত করবেন।”
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন বলেন, “আমি পরে গিয়েছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঝামেলা হচ্ছিল। সেখানে অধ্যক্ষের ছেলে আসেন। এটা নিয়েই ঝামেলাটা হয়।”