নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ দাবিতে প্রচারপত্র বিতরণের আগে তিনি এসব কথা বলেন৷
Published : 14 Jan 2025, 05:33 PM
এখন যারা আওয়ামী লীগের মানবাধিকারের জন্য সরব হয়েছেন, তারাই এতদিন ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেছেন, “যেসব টকশোজীবী ও বুদ্ধিজীবী এখন আওয়ামী লীগের মানবাধিকারের জন্য সরব হয়েছেন, আপনারাই এতদিন ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।”
‘ফ্যাসিবাদের’ পক্ষে লিখলে কলম ভেঙে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়ে এ ছাত্রনেতা বলেন, “ফ্যাসিবাদের পক্ষে যে কলম লিখবে আমরা সেই কলম ভেঙে দেব। ফ্যাসিবাদের পক্ষে যেসব মিডিয়া, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী কথা বলবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেব।
“আমাদের তরুণ প্রজন্মের কথা যদি আপনারা বুঝতে ব্যর্থ হন, তাহলে আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে, আপনাদেরও একই পরিণতি হবে।”
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ দাবিতে প্রচারপত্র বিতরণের আগে তিনি এসব কথা বলেন৷
আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের আগে তাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে মন্তব্য করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে কিনা সেটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন নয়। আগে তাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারের আগে যারা পুনর্বাসনের কথা বলবে, যারা বলবে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, আমরা ধরে নেব, আওয়ামী লীগ যে জাহেলিয়াতের রাজনীতি কায়েম করেছিল সেখানে তাদেরও ইন্ধন ছিল।”
তিনি বলেন, “আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশ হবে অতীতের রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও তরুণ প্রজন্মের ভয়হীন মনোভাবের সংমিশ্রণে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের একক এজেন্ডার প্রবণতা দেখছি। যদি তরুণদের মাইনাস করার চিন্তা থাকে, তাহলে আমরা বলতে চাই, এ আন্দোলনে যত ক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ছিল, তারা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এসে এ ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, সবার আগে আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে।”
রাষ্ট্রযন্ত্র অওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের বিভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে- বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, “আমরা বিপ্লবী শক্তি, আমাদের হারানোর কিছু নেই। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নতুন করে নেওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে কিনা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে ৫ অগাস্ট।”
‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ ঘোষণাপত্রের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ‘দৃশ্যমান’ পদক্ষেপ দেখছেন না বলেও জানান হাসনাত৷
তিনি বলেন, “আমাদের আল্টিমেটাম ১৫ তারিখ পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রক্লেমেশন করা হবে। তবে দুঃখজনক হল, আমরা এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। আপনাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি, আপনারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের যদি মনে হয় এখানে কোনো বাধা আছে, সেটা জনগণের কাছে প্রকাশ করুন। আমরা আবারও রাস্তায় নেমে আসব। যদি ব্যর্থ হন তাহলে উপদেষ্টা থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসুন।”
এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্থা শারমিন বলেন, “এই নারায়ণগঞ্জ একটা দুর্গ হয়ে বাংলাদেশকে নতুন আশা দেখিয়েছিল৷ বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি জোনে তরুণরা যে অভূতপূর্ব সাড়া দেখিয়েছিল তা কখনও ভুলে যাওয়ার মত নয়৷ কিন্তু অভ্যুত্থানের পর নানা পক্ষ নানাভাবে এসব আমাদের ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ এক দফা দাবি কোনো ব্যানারের নেতৃত্বে কারা উচ্চারিত করেছিল তাও বিকৃত করা হচ্ছে৷ তরুণদেরকে আবারও একত্রিত হতে হবে৷”
“প্রক্লেমেশনের কথা আমরা বলছি কারণ, তরুণরা যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধের একটি ধারাবাহিকতা মাত্র৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে একটি দল তাদের করাল গ্রাসে নিয়ে গিয়েছিল৷ সেই মুক্তিযুদ্ধকে এ তরুণরা চব্বিশের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিক-জনতার মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছে৷”
নতুন সংবিধান রচনার দাবি জানিয়ে সামান্থা বলেন, “মুজিববাদকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করতে হবে৷ মুজিববাদ দিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের দীর্ঘদিন কনফিউজ করে রাখা হয়েছে৷ আমরা আর কনফিউজ না৷ চব্বিশের তরুণরা দেখিয়েছে, তারা কী করতে পারে৷”
‘জুলাই বিপ্লব’র ঘোষণাপত্রের দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চাষাঢ়া, শিমরাইল ও কাঁচপুর এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করেন৷
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, সহমুখপাত্র আরেফিন মুহাম্মাদ হিজবুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী।