ইতোমধ্যে এই ৪১ নেতার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে।
Published : 05 Jun 2023, 12:30 AM
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় খুলনা ও বরিশালের পর এবার সিলেটের নেতারা বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
ইতোমধ্যে শনিবার সিলেট বিএনপির এই ৪১ নেতার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে।
একইভাবে খুলনা ও বরিশালে নেতাদের নামে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছিল। এরপর তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ার কথা বলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। কারণ দর্শানো এবং বহিষ্কারের চিঠির সবক্ষেত্রে ভাষা এক।
তাই ধারণা করা হচ্ছে সিলেটের নেতাদের ভাগ্যেও একই পরিণাম রয়েছে।
সিলেট বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নেতা-কর্মীদের বার বার বলা হয়েছে। তারপরও যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
শনিবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পাঠানো চিঠিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে প্রার্থী হওয়া ৪১ নেতার কাছে।
জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের ‘আজীবন বহিষ্কার’ করা হবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানান।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। কিন্তু সিলেটে যারা দলের সিদ্ধান্ত আমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।”
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিলেটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না হতে দলের নেতা-কর্মীদের আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। যারা দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে শোকজের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।”
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। ২৩ মে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। ২৫ জুন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়েছে। ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল। ২ জুন হয় প্রতীক বরাদ্দ।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
এবার দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না আরিফুল হক চৌধুরী।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির ১৯ জন এবং খুলনায় ৮ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বরিশালে এবং শনিবার রাতে খুলনায় চিঠি পাঠানো হয়। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে দেওয়া সব চিঠির ভাষা এক।
বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, “… সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয়। আপনার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গত ১৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে করা গুম, খুন ও সরকারি পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন পরিবারসহ গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কারর করা হলো। গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাসে আপনার নাম একজন বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর হিসেবে উচ্চারিত হবে।”
আরও পড়ুন