জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
Published : 03 Mar 2025, 12:46 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় জ্বালিয়ে দেওয়া নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সংস্কার শেষ হয়নি এখনও। সাত মাসেও পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা।
আর এতে জেলা সদরসহ উপজেলার বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজনে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার পাসপোর্ট কার্যালয়ের থেকে কাজ সারতে হচ্ছে।
তবে পুড়িয়ে দেওয়া ভবনের মেরামত শেষে আগামী ১৫ মার্চ থেকে পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম আবার চালুর কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের অদূরে বাসা ৫০ বছর বয়সি মতিন খানের। লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত মতিন চিকিৎসার জন্য ভারত যাবেন। পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কার্যালয়ে গেলে জানতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাসপোর্ট কার্যালয়ে কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। এখনো চলছে পুড়ে যাওয়া ভবনের মেরামত।
কার্যালয়ের সামনে টানানো ব্যানার থেকে তিনি জানতে পারেন, তাকে যেতে হবে ঢাকা কেরানীগঞ্জ কার্যালয়ে। এতে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে অফিস ভবন, আসবাবপত্রসহ প্রায় প্রস্তুত রাখা পাঁচ হাজার পাসপোর্ট নষ্ট হয়ে যায়।
সাত মাসেও আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়নি, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ করে এই কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
মতিন খান বলেন, তিনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চান। কিন্তু পাসপোর্ট নবায়ন করতে বারবার কেরানীগঞ্জ যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“গত কয়েক মাস ধরে এখানে আসছি আর ফিরে যাচ্ছি। এখন আবার বলছে মাসখানেক পরে আসতে। কবে যে এদের কার্যক্রম শুরু হবে!”
মতিনের মতো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ী লিটন শেখ। তিনি বলেন, ছবি তোলার জন্য পাঁচবার কেরানীগঞ্জ গিয়েও কাজ হয়নি। যাতায়াতের খরচ ও হয়রানিতে তিনি চরম অসন্তুষ্ট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জের এই আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মানুষ পাসপোর্ট তৈরিসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতেন। তবে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জকে তিন জোনে ভাগ করে পার্শ্ববর্তী জেলার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।
এতে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লার বাসিন্দারা ঢাকার কেরানীগঞ্জ; সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বাসিন্দারা নরসিংদী এবং বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
যদিও এতে এই জেলার বাসিন্দাদের যাতায়াত খরচের পাশাপাশি ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। সেইসঙ্গে অন্য জেলায় গিয়ে দালালের খপ্পরেও পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে পাসপোর্ট কার্যালয় মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও অগ্নিকাণ্ডের সাড়ে সাত মাস পরও মেরামত কাজ শেষ হয়নি ভবনটির।
নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের তথ্য মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনসহ বিভিন্ন কারণে মেরামত কাজের টেন্ডার পেতে দেরি হয়। গত বছরের নভেম্বরে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয় এবং ‘বাবর অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ ডিসেম্বর মেরামত কাজ শুরু করে। তিন মাসের প্রকল্প হিসেবে ২৫ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্মাণ শ্রমিকরা মেঝেতে টাইলস স্থাপনের কাজ করছেন। আর কয়েকজনকে জানালার কাজ করতে দেখা গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান বলেন, “মেরামতের প্রায় সব কাজ শেষ। এখন শুধু রঙ ও টাইলসের কাজ চলছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম বলেন, “মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। মার্চের ৫ তারিখে ভবনটি পাসপোর্ট কার্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা আছে।”
তবে মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পরপরই সেবা কার্যক্রম শুরু করা যাবে না; এজন্য অপেক্ষা আরও কয়েকদিন করতে হবে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আগামী ১৫ মার্চ পাসপোর্ট কার্যালয়ের কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। শিগগির নারায়ণগঞ্জবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন বলে আশা করি।”